কবিতা শুধু পাঠের জন্য নয়, কবিতার যে অর্ন্তগত ভাব থাকে তা অনুভব করতে পারলে একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতা পাঠের তৃপ্তি লাভ করা যায়। কবিতার বহুমুখি ব্যাখা হতে পারে কিন্তু এর মধ্য যে একটি ম্যাসেজ বা বার্তা থাকে তা সব পাঠক তাৎক্ষণিক আবিষ্কার করতে পারেন না। কেউ হয়তো একই কবিতা বারবার পাঠ করেন একধরণে ভালো লাগা থেকে। আবার কেউ কবিতাটিকে হয়তো নিছক পড়ে যান। তবে কবিতা পাঠ করার থেকে শোনার মধ্যে এক ধরণের প্রবল আকর্ষণ রয়েছে। সঠিক উচ্চারণ আর পাঠের ঢং একজন শ্রোতাকে মুগ্ধ করে রাখতে পারে। সব থেকে বড় কথা হলো কবিতার জন্য একজন কবিকেই সব থেকে বেশি নিবেদিত হতে হয়। উৎসর্গ করতে নিজেকে কোন বিনিময় ব্যতিত! স.ম. শামসুল আলম কবিতার জন্য নিবেদিত এক প্রাণ। আত্মগৌরব নয়, আত্মদানের মানে নিজের যাবতীয় অর্জন কবি তার শব্দে শব্দে সাজিয়ে পাঠকের কাছে নিবেদন করেন। বাংলার এক গ্রামীণ রূপ রস সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি থেকে কবি উঠে এসেছেন শহুরে ইট বালি পাথরের জঙ্গলে। কিন্তু তার স্মৃতিতে সেই সোনালী দিনের জল থৈ থৈ। কচি ধান চারার সবুজ ঢেউ। গোধূলির আলো ছায়া। ডাহুকের ডাক। ‘একদিন বুকজলে নেমে’ বইটির প্রথম কবিতাটিতে কবি লেখেন- ‘একদিন বুকজলে নেমে আমন ধানের ক্ষেতে ডাহুকের ডাকে সাড়া দিতে হেটে হেটে খুঁজেছি ডাহুক তখন আগত সন্ধ্যা, লাল সূর্য দিগন্তে হারিয়ে গেছে আর তার রক্তিম আভায় পশ্চিমাকাশ উঠেছে মেতে কাদায় পা রেখে সন্তর্পণে পানিতে হাঁটছি যেন শব্দ না হয় ডাহুক ধরার নেশা আমাকে উতলা করে, সম্মুখে এগাই’ (একদিন বুকজলে নেমে/পৃষ্ঠা-৭)
স.ম. শামসুল আলম ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলাধীন শিকজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম এস. এম. শাহজাহান আলী এবং মাতা সালেহা শাহজাহান। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং একই বছরে ফরিদপুর জেলা পরিষদের মুখপত্র 'মাসিক গণমন'-এ প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'হিংসার নক্ষত্র এক'। ১৯৯৪ সালে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই তাঁকে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার কার্যনির্বাহী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই মেলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখিতে সক্রিয় এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, শব্দরম্য, নাটক, কলাম, উপসম্পাদকীয় ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর ৪০টির অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা গ্রন্থের সংখ্যা বেশি। স.ম. শামসুল আলম বেশ কিছু সংগঠন থেকে সংবর্ধনা-সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাভীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মাননা-২০১৪, কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য কবি ওমর আলী সাহিত্য পদক-১৪২২, ছড়াসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক-২০১৬, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি কর্তৃক মায়ের অলংকার গ্রন্থের জন্য কিশোরকবিতা সম্মাননা-২০১৬ প্রভৃতি। বর্তমানে তিনি নির্মাণ ও আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। শিশু-কিশোর সংগঠন আনন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি দুই সন্তানের জনক- কন্যা শামাদান উফা ও পুত্র আনজাম আনন। স্ত্রী নিগার সুলতানা জুঁই।