বাংলা ছোটগল্পের বাঁকবদল কিংবা গল্পের আঙ্গিক নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন গল্পকারেরা। এ পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সব গল্প। বাস্তবতা-পরাবাস্তবতা, আধুনিকতা-উত্তর আধুনিকতা নানা রকম তত্তে¡র ওপর লেখক তার সৃষ্টিকে শানিত করে নেন। মাহমুদ কামালের ‘এলাচিপুরের সেই লোক’ গ্রন্থে যে কটি গল্প রয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ গল্পই অতিবাস্তব, কিছুটা রহস্য আর কিছুটা ভৌতিক বলা যায়। এ ধরণের গল্প খুব একটা চর্চা হয় না বাংলা গল্পে। সে ক্ষেত্রে তার এই ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা পাঠকদের মনে আরও সাড়া জাগাবে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত এ বইটির পাঠক ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। অনেকেই এই বইটি পড়ে তাদের নানা ধরণের অভিমত প্রকাশ করেছেন। ৮ টি গল্প রয়েছে এই বইটিতে। বইটির প্রথম গল্পের নাম থেকেই বইটির নামকরণ করা হয়েছে ‘এলাচিপুরের সেই লোক’। এ গল্পটি একটি জাদুবাস্তব গল্প। এ বইতে বেশ কিছু গল্পই জাদুবাস্তব গল্প হিসেবে লেখা হয়েছে। মাহমুদ কামালে এলাচিপুরের সেই লোক বইটি বাংলা ছোটগল্পের একটি ব্যতিক্রমী গল্পের বই হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে। গল্পগুলোর চরিত্রগুলো এমন রহস্যময় যে এক একটি গল্পের চরিত্র অনেক দিন মনে থাকার মতো। পড়তে গেলে প্রথমেই খুব সচেতন থাকতে হবে পাঠককে। কেননা গল্পকার এমন গোলক ধাঁধায় ফেলে দেন ঘটনা আর বর্ণনার মারপ্যাঁচে যে, এক পাঠেই এ গল্পগুলোর স্বাদ বা ঘটনা উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। নিঃসন্দেহে এটা একজন লেখকের শক্তিমত্তা। রচনার দক্ষ হলে একজন লেখক হয়ে ওঠেন অনন্য ও পাঠকপ্রিয়। মাহমুদ কামাল একজন কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। গল্পচর্চায় খুব বেশি সময় না দিলেও তার যে গল্প তৈরির প্রতিভা এ বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে তা তার পাঠকদের জন্য খুবই আনন্দের। কবিতার মধ্যে যেমন গল্প থাকে, গল্পের মধ্যেও কবিতার ব্যঞ্জনা থাকে বিমূর্তভাবে। তাই কবি যদি গল্পের দিকে মনোযোগী হন তবে সে গল্প হয়ে ওঠে কাব্যিক গল্প। এ গল্পগুলোর মধ্যে সেই নির্দশন অতিমাত্রায় রয়েছে। গল্পপাঠকদের জন্য এটি একটি সংগ্রহে রাখার মতো বই।