এ কথা বলা যায় যে, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে তার অর্ধেক ঘটনা ঘটে রাজনীতির কারণে। রাজনীতি শুধু রাষ্ট্রের না, মানুষের ব্যক্তি জীবনকেও প্রভাবিত করে। রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে যখন নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয় তখন মানুষ হয়ে পড়ে দিশেহারা। আর দিশেহারা মানুষের পাশে কিংবা তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে ছড়া। যাকে আমরা রাজনৈতিক ছড়া বলি। ‘শরম দেব গরম দেব’ স.ম. শামসুল আলম-এর একটি রাজনৈতিক ছড়ার বই। রাজনীতি নিয়ে এমন শানিত ও বুদ্ধিদৃপ্ত ছড়া খুব একটা দেখা যায় না। কেননা পক্ষ কিংবা বিপক্ষ নিয়ে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে যখনই কোনো সত্য উচ্চারিত হয় তখন সে উচ্চারণ স্তব্দ করে দিতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো। এক্ষেত্রে লেখকের সাহস থাকাটা খুবই জরুরি। বর্তমানে স.ম. শামসুল আলম তেমনি একজন সাহসী ছড়াকার। ‘আসলে কাছে মান যাবে না ভালবাসার টান যাবে না। জান যাবে না বুঝেও কেন অবুঝ? আমরা জানি দুজনেরই মনটা অনেক সবুজ। ঐ দুটি মন একটি ডালে গোলাপ হয়ে ফুটলে কী ক্ষতি হয়? সমস্বরে গানটি গেয়ে উঠলে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ কী ক্ষতি হয়? একটুখানি বসলে পাশাপাশি’ যদিও এ ছড়ার মধ্যে কারো নাম নেই কিন্তু কারোরই বুঝতে অসুবিধা নেই যে, কাদের উদ্দেশ্য করে এ ছড়াটি রচিত হয়েছে। ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে সরকারী দল, ও বিরোধী দলের প্রধান নারী। তাদের মধ্যে দেশের রাজনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগতও অনেক টানাপোড়েন রয়েছে ফলে তাদের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণের কাছে অকল্পনীয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে যুদ্ধ অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল তা ছিল বর্বরোচিত ও পৈচাশিক। এ দেশের মানুষই পাকিস্তানী হায়নাদের সাথে মিলে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের ওপর চালায় নানা ধরণের হত্যা, নির্যাতন ও লুণ্ঠন। সেই সমস্ত রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের ধিক্কার জানিয়ে ছড়া লিখেছেন স.ম. শামসুল আলম। ‘এপার থেকে কর্তারা সব ভালবাসার বুলি ছোঁড়ে, বিনিময়ে দাদামশাই ওপার থেকে গুলি ছোঁড়ে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেও কে প্রতিজ্ঞা ভুলে থাকে? কেন বাংলাদেশ জননী কাঁটাতারে ঝুলে থাকে?’ বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার সীমান্তে যে অবিচার ও সন্ত্রাস সংগঠিত হচ্ছে তা যেন দিন দিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। এর প্রতিকারে আমাদের দেশের সরকারকে হতে হবে আরও বেশি দায়িত্বশীল ও কঠোর। এ বইটির সবগুলো ছড়াই বলিষ্ঠ ও সত্য উচ্চারণ। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করতে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে এ বইটি অন্যতম একটি বই বলা যায়।
স.ম. শামসুল আলম ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলাধীন শিকজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম এস. এম. শাহজাহান আলী এবং মাতা সালেহা শাহজাহান। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং একই বছরে ফরিদপুর জেলা পরিষদের মুখপত্র 'মাসিক গণমন'-এ প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'হিংসার নক্ষত্র এক'। ১৯৯৪ সালে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই তাঁকে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার কার্যনির্বাহী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই মেলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখিতে সক্রিয় এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, শব্দরম্য, নাটক, কলাম, উপসম্পাদকীয় ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর ৪০টির অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা গ্রন্থের সংখ্যা বেশি। স.ম. শামসুল আলম বেশ কিছু সংগঠন থেকে সংবর্ধনা-সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাভীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মাননা-২০১৪, কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য কবি ওমর আলী সাহিত্য পদক-১৪২২, ছড়াসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক-২০১৬, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি কর্তৃক মায়ের অলংকার গ্রন্থের জন্য কিশোরকবিতা সম্মাননা-২০১৬ প্রভৃতি। বর্তমানে তিনি নির্মাণ ও আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। শিশু-কিশোর সংগঠন আনন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি দুই সন্তানের জনক- কন্যা শামাদান উফা ও পুত্র আনজাম আনন। স্ত্রী নিগার সুলতানা জুঁই।