“আমি গাধা বলছি” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ উর্দু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী কৃষণ চন্দর। উর্দু ছােটগল্প ও উপন্যাসে নতুন মােড় আনতে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেন। প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনে কৃষণ চন্দর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। জীবদ্দশাতেই কৃষণ চন্দর উর্দু কথাসাহিত্যে প্রবাদ পুরুষে পরিণত হয়েছিলেন। কৃষণ চন্দর গল্প লেখায় যতটা সফল উপন্যাস লেখাতেই ততটাই। তার উপন্যাস লেখার স্টাইল গল্প লেখার স্টাইল থেকে ভিন্ন। কৃষণ চন্দরের উপন্যাস বড় হয় না, তবে তাকে বড় গল্পের পর্যায়ে ফেলা যায়। দৃশ্য পটের বিস্তার পরিণত সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানবিক চেতনার জটিলতার সাথে পরিচয় কৃষণ চন্দরের উপন্যাসের। বিষয়বস্তুকে বিশেষ চরিত্রের রূপ দিয়েছে। কৃষণ চন্দরের গল্প উপন্যাসে ব্যঙ্গ একটি সাধারণ লক্ষণ। ব্যঙ্গোর একটি ধারাবাহিক প্রবাদ তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস গল্পে দেখা যায় সামাজিক বৈষম্য ও ভেজাল সংস্কৃতিকে তিনি তীক্ষ্ণ ভাষায় ব্যঙ্গ করে লিখেছেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস “আমি গাধা বলছি”। তার এই ব্যঙ্গ নির্ভেজাল রােমান্টিক গল্পেও দেখা যায়। গাধার মুখ দিয়ে তিনি সমাজের অসঙ্গতি মানুষের জীবনের দুর্গতি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি গাঁধাকে ভাল মানুষের সাথে তুলনা করেছেন। উপন্যাসের সর্বশেষ লাইনে, তার মূল্যায়ন হল, “গাধা, জীবনের শ্রম এবং ভাল মানুষী দিয়ে গড়া এক নিস্পাপ সত্তা”। তার মতে, মানুষের চেয়ে অনেক উত্তম একটি গাধা’। আমি গাধা বলছি' উপন্যাসের মূল বক্তব্যও তাই ।
উর্দু সাহিত্যের অমর কথা শিল্পী কৃষণ চন্দর। উর্দু গল্পকে এক নতুন দিক দেখাতে কৃষণ চন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অবদান কৃষণ চন্দর। ১৯৩৮ সালে কলকাতায় প্রগতিশীল লেখক সংঘের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, কৃষণ চন্দর তাতে অংশ নেন। তাঁকে সেই সম্মেলনে প্রগতিশীল লেখক সংঘ পাঞ্জাব শাখার সম্পাদক মনােনীত করা হয়। শিক্ষকতা করার সময় তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ সময় তিনি ভগত সিং এর দলে যােগ দেন। এ জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং দু’মাস জেল খাটেন। কৃষণ চন্দর তার ৬৩ বছরের জীবনের ৪০ বছর উর্দু সাহিত্যের উন্নয়নে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি অবিচ্ছিন্নভাবে লিখেছেন গল্প, উপন্যাস নাটক, চিত্ৰকাহিনী, চিত্রনাট্য ও শিশু সাহিত্য। লিখেছেন পাঁচ হাজারের অধিক উর্দু ছােট গল্প । এ ছাড়া লিখেছেন ৮টি উপন্যাস। বিভিন্ন বিষয়ে ত্রিশটি গ্রন্থ এবং তিনটি রিপাের্টাজ। কৃষণ চন্দর ছিলেন খুবই উদার দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। তিনি ধর্মীয় রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্ত সংকীর্ণ দৃষ্টি থেকে মুক্ত ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় গােড়ামীর তিনি সারাজীবন বিরােধিতা করেছেন।