মি খুবই ছোটো। সবে ক্লাস ওয়ান কি টু। আমি তখন গোলাপীরঙ হাওয়াই মিঠাই খুব ভালোবাসি। কিন্তু ঘণ্টা বাজানো মিঠাইওয়ালা যেদিন গ্রামে আসত, সেদিন হয়তো আমি স্কুলে। সেই ছোটোবেলা থেকেই ছোটো ছোটো বঞ্চনার চিনচিনে ব্যথাগুলো আজও বুকের মধ্যে রিনরিন করে বেজে ওঠে। যখন আমার ক্লাস নাইন, তখন যে আমার জন্য কুল নিয়ে আসত, আমি সেই কুল পাঁচজনে মিলে মজা করে খেয়েছি। যার কুল ভাগ করে খেয়েছি সেই কুলের মধ্যে যে অকুল প্রেম ছিল তখন বুঝব কী করে? যে কূলে আমার জন্যে আকুল ভালোবাসার আহ্বান ছিল, আমি সে কূলের বিপরীতে ঘর বেঁধেছি। যে আমার আমার জন্য সর্বস্ব পণ করেছিল, আমি তাকে চিনতেই পারিনি। যে আমাকে নিঃস্ব করার ফাঁদ পেতেছে, আমি সেই ফাঁদেই ঝাঁপ দিয়েছি। ছোটোবেলার ভুলের মাশুল নিজেই দিয়েছি, সে-সব শোধবাদ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন আমার নিরীহ বড়ো বেলা। এখন আমি মাঝে মাঝে একা ভুল করি, মাশুল দিই আমি আর আমরা মিলে। ছোটো মানুষের ছোটো ভুলে জাতির কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু বড়ো মানুষের ছোটো ছোটো ভুলেরও মাশুল দিতে হয় জাতির প্রতিটি মানুষকে। আরো অনেকের মতো আমার ভেতরেও একজন সুখসুখ ভাবুক কবি বাস করে। সেই কবি মাঝে মাঝেই অনেক ভিড়ের ভেতরে থেকেও নিজের মধ্যে ডুবসাঁতার কাটে, তুলে আনে জলের অতলে তলিয়ে থাকা কাদামাটির গন্ধ। সেই গন্ধসুধার কিছু প্রাণঘ্রাণ ফেসবুকেও মাঝে মাঝেই দিয়েছি। অনেক বন্ধু সে ঘ্রাণ গ্রহণ করেছেন। আমিও তাই সাহস করে সেগুলো ‘একলা সুখের শূন্য দুপুর’-এ রেখেছি।
রবিশঙ্কর মৈত্রীর জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। বাবা ঋত্বিক কুমুদরঞ্জন, মা জয়ন্তী দেবী । পৈত্রিকনিবাস ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলার নরকোণা গ্রামে। শৈশব থেকেই লেখালেখি শুরু। প্রথম কবিতা লেখা এবং সম্পাদনা দেয়াল পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ, মাসিক সন্দীপনা পত্রিকায়, এরপর জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে ছােটোগল্প প্রবন্ধ প্রকাশিত। প্রথম উপন্যাস জলগুহ, প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে, তারপর থেকে প্রতি বছরই রবিশঙ্কর মৈত্রী বই। প্রকাশিত হচ্ছে এ যাবত তাঁর পঞ্চাশটি বই প্রকাশিত। রবিশঙ্কর মৈত্রী দেশহারা হলেও এক অবিচল। জীবনযােদ্ধা তিনি মরমী ভাবের মানুষ। মরমী ভাব বিতরণের মধ্য দিয়ে শুদ্ধ সত্য সুন্দর মানুষের সম্মিলন রচনাই তার ব্রত। রবিশঙ্কর মৈত্রী আবৃত্তি করেন। আবৃত্তির প্রশিক্ষক। তিনি সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা করছেন ১৯৯৩ থেকে, আবৃত্তি প্রশিক্ষণের জন্য রবিশঙ্কর মৈত্রী ঘুরেছেন বহুস্থানে বহুবার। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের শুদ্ধ চর্চার জন্য তিনি নিরন্তর কাজ করেছেন। আবৃত্তিচর্চার ভেতর দিয়ে নতুন প্রজন্মকে মূল্যবােধসম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন রবি। তাঁর আবৃত্তি কবিতাপ্রেমীদের কাছে আদৃত। সাহিত্য সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি রবিশঙ্কর মৈত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি টেলিভিশনের জন্য শতাধিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ফাদার মারিনাে রিগন : ভেনিস টু। সুন্দরবন প্রামাণ্যচিত্রটি দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত। রবিশঙ্কর মৈত্রী এখন ফরাসি দেশবাসী।