ভূমিকা জ্যোতির্বিদ্যার ভাগ্যটা ভাল; তার কোন প্রসাধনের প্রয়োজন হয় না, একথা বলেছেন ফরাসি পণ্ডিত আরাগো। তার কীর্তি এতই মনোমুগ্ধকর যে মন আকর্ষণের জন্য বিশেষ চেষ্টা করতে হয় না। কিন্তু আকাশের বিজ্ঞান শুধু কতগুলো বিস্ময়কর আবিষ্কার আর দুঃসাহসী তথ্যের সমষ্টিই নয়। তার মূল ব্যাপারগুলো সবই সাধারণ ঘটনা, যা প্রতিদিনই ঘটে। এ বিষয়ে যারা অনভিজ্ঞ তাদের অধিকাংশেরই সাধারণভাবে বলতে গেলে জ্যোতির্বিদ্যার এই নীরস দিকটা সম্বন্ধে ধারণা খুবই ঝাপসা। এতে তারা খুব কম কৌতূহলই অনুভব করে কারণ যা সারাক্ষণই চোখের সামনে রয়েছে তার ওপর মনোনিবেশ করা সহজ নয়।
‘জ্যোর্বিদ্যার খোশখবর’ বইটির বিষয় প্রধানত আকাশ বিজ্ঞানের এই দৈনন্দিন দিকটি, তার সূচনা- পরবর্তী আবিষ্কার নয়। বইটিরেউদ্দেশ্য হল জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল তথ্যের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেয়া। কিন্তু এটিকে পাঠ্যবই বলে মনে করবেন না, কারণ আমাদের উপস্থাপনে পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যেসব সাধারণ তথ্যের সঙ্গে আপনারা পরিচিত তাদের আকস্মিকভাবে উল্টিয়ে, বা কোন অদ্ভত অপ্রত্যাশিত কোণ থেকে দেখান হয়েছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হল কল্পনাশক্তির উদ্বোধন আর কৌতূহলের উদ্রেক। পেশাদারি ‘পরিভাষা’ এবং সেই সঙ্গে টেকনিকাল ঝামেলা, যার ফলে পাঠকরা প্রায়ই জ্যোতির্বিদ্যার বই পড়তে ভয় পান তার ভার থেকে বইটিকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখতে চেয়েছি।
লোকশিক্ষার বিজ্ঞানগ্রন্থ প্রায়ই গুরুগম্ভীর হয় না বলে ভৎসিত হয়। একদিক দিয়ে সে ভর্ৎসনা যুক্তিযুক্ত আর (গাণিতিক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কথা মনে রাখলে) যে কোন রকমের আঁকজোক বাদ দেয়ার যে প্রবণতা তাতেই এই ভর্ৎসনার সমর্থন পাওয়া যাবে। অথচ একমাত্র আঁকজোকের সাহায্যেই, তা সে যতই প্রাথমিক গোছের হোক না কেন, বিষয়টি আয়ত্ত করা সম্ভব। তাই ‘জ্যোতির্বিদ্যার খোশখবর’-এ অত্যন্ত সহজ সরল অঙ্ক বাদ দেবার চেষ্টা করা হয়নি। অবশ্যই তাদের সহজভাবে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে, স্কুলের গণিতবিদ্যা দিয়েই তা বেশ বোঝা যাবে। লেখকের বিশ্বাস, এই সব অনুশীলনে যে শুধু অধীনত জ্ঞান ঝালানো যাবে তাই নয়, আরো গভীর পড়াশোনার সূচনাও তা ঘটাবে।
এই বইয়ে পৃথিবী, চাঁদ, গ্রহ, তারা আর মাধ্যাকর্ষণ সম্বন্ধে নানা পরিচ্ছেদ আছে। এই ধরনের বইয়ে সাধারণত যেসব বস্তু আলোচিত হয় না প্রধানত তাদের উপরই বেশি মনোনিবেশ করা হয়েছে। এখানে বলা উচিত যে এ বইয়ে আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার সমৃদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের বিস্তৃত বিশ্লেষণ দেবার চেষ্টা করা হয়নি।
ইয়াকত পেরেলমান
সূচিপত্র * পৃথিবী, তার আকার ও গতি * চাঁদ আর তার গতি * গ্রহেরা * তারারা * মাধ্যাকর্ষণ
রাশিয়ার বিখ্যাত জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক ইয়াকভ পেরেলমান ১৮৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর বাইলস্টক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সেন্ট পিটার্সবার্গ ফরেস্ট্রি ইনস্টিউট থেকে ১৯০৯ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে তিনি বিজ্ঞানকে মানুষের মাঝে জনপ্রিয় করে তােলার কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। পদার্থবিজ্ঞানের মজার কথা' বইয়ের অভূতপূর্ব সাফল্যের পর তিনি আরও লেখেন ‘পাটীগণিতের মজার কথা’, ‘বলবিদ্যার মজার কথা, ‘জ্যামিতির মজার কথা’, ‘জ্যোতির্বিদ্যার খােশখবর’, ‘সরস গণিত’ ‘সর্বত্র পদার্থবিজ্ঞান’। তার এই বইগুলাে তৎকালীন সােভিয়েত ইউনিয়নে বিপুলভাবে সমাদৃত হয় এবং বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়। পরে পেরেলমান সােভিয়েত ইউনিয়নের পাঠ্যবইও রচনা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে তিনি পরলােক গমন করেন। রাশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বর্তমান গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে ইয়াকভ পেরেলমানের প্রভাব ও অবদান অনস্বীকার্য। গ্রেগরী পেরেলমান ২০০৬ সালে ‘পয়েনকেয়ার কনজাকচার’ সমাধান করে সারা দুনিয়ায় তাক লাগিয়ে দেন। গণিতবিদ গ্রেগরী পেরেলমান তাঁর গণিতের আগ্রহের ব্যাপারে স্কুলজীবনে ‘পদার্থবিজ্ঞানের মজার কথা' বইটির কথা উল্লেখ করেছিলেন।