"উপমহাদেশের শিল্পকলা" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: উপমহাদেশের শিল্পকলা গ্রন্থটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের সমস্ত চারুকলা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকরূপে লিখিত। বাংলা একাডেমী এটি প্রথম প্রকাশ করে ১৯৯৩ সালে। বইটি এ বিষয়ে লিখিত প্রথম ও একমাত্র বই হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে বিশেষ করে চারুকলার ছাত্রছাত্রীদের কাছ। থেকে। মূলত বইটি প্রাথমিকভাবে এম. এফ. এ. শ্রেণীর পাঠ্যসূচি অনুসারে লেখা হয়। পরবর্তীকালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের অনার্স কোর্স চালু হবার পর এটি অনার্সের পাঠ্যসূচিতে স্থান পায়। তাই সনাতন মাস্টার্স এবং অনার্স এই দুই শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি বর্তমানে পাঠ্য হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বইটির প্রয়ােজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা থাকলেও বাংলা একাডেমী আর্থিক কারণ দেখিয়ে পুনঃপ্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে। তাই ছাত্রছাত্রী এবং আগ্রহী সুধী পাঠককুলের দাবি ও চাহিদার দিকে নজর দিয়ে বইটি পুনঃপ্রকাশিত হলাে। বর্তমান গ্রন্থকার এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং এ বিষয়ের শিক্ষক। বইটিতে সেই পাঁচ হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতা। থেকে শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শিল্পবিকাশের ধারা ও মনােজাগতিক ধারার ক্রমবিকাশকে অত্যন্ত সহজসরলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে উপস্থাপন করা হয়েছে মৌর্য, সুঙ্গ, গুপ্ত, কুশানসহ প্রায় সমস্ত শিল্পধারা । এই সংস্করণে গ্রন্থকার পুরাে বইটি সম্পাদনা, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করেছেন। প্রথম সংস্করণের কিছু। সীমাবদ্ধতাকে উত্তণের প্রচেষ্টা করার চেষ্টা করা। হয়েছে। এ ছাড়া এই সংস্করণের সবচেয়ে বড় বােনাস হচ্ছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে পঠিত তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধসমূহ। এগুলাে পরিশিষ্টে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ফলে বইটির কলেবর এক দিকে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি গুণগত মানও বেড়েছে অনেক অনেক বেশি। আশা করি নতুন এই সংস্করণ দেশের আপামর শিল্পকলা শিক্ষার্থী ও শিল্পানুরাগী পাঠকের প্রয়ােজন মেটাতে সক্ষম হবে।
লেখকের শিক্ষাজীবনের শুরু ১৯৫৬ সালে কুষ্টিয়ার চার্চ অফ বাংলাদেশ স্কুলে। কুষ্টিয়া জেলা স্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে কৃতিত্বের সাথে বিজ্ঞান বিভাগে এস.এস.সি. পাশ এবং ১৯৭০ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগ থেকে ক্রেডিটসহ বি.এফ.এ. পাশ। করেন। এম.এ.ইন ফাইন আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২। ফাইন আর্টস্হিস্ট্রি অফ আর্টস্'-এ পি-এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩-তে। ১৯৯০ সালে জাপানের টোকিও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ। ফাইন আর্টস্ ও মিউজিকে পােস্ট ডক্টরাল গবেষণা। ১৯৭৫ সালে খুলনা টি.টি. কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবনের শুরু। এরপর ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত খুলনা আর্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে যােগদান। ১৯৮৮ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটে আগমন। বর্তমানে ঐ বিভাগের প্রফেসর। ১৯৭২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ বেতারের একজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। এ ছাড়া কম্পিউটারে সৃজনশীল চিত্রকলা নির্মাণে তিনি একজন পথিকৃৎ। বিশিষ্ট শিল্প সমালােচক। দেশে-বিদেশে বহু সেমিনারে গবেষণামূলক প্রবন্ধপাঠ ও প্রকাশ । প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হচ্ছে : উপমহাদেশের শিল্পকলা বাংলা একডেমী, ১৯৯৩; ২য় সংস্করণ মাওলা বাদার্স, ২০০৩; পাশ্চাত্য শিল্পের ইতিহাস বাংলা। একাডেমী, ১৯৯৪; ২য় সংস্করণ মাওলা ব্রাদার্স, ২০০৬; Folk Painting in Bangladesh বাংলা একাডেমী, ২০০১; বিশ্ব সভ্যতা ও শিল্পকলা বাংলা একাডেমী, ২০০১; কিউবিজম ও অনুষঙ্গ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ২০০০। এ ছাড়া মৃৎশিল্প যুগে যুগে গ্রন্থটি বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিতব্য।