"মানব প্রকৃতির স্বরূপ অন্বেষা" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: স্পষ্টতই মানবপ্রকৃতির সঙ্গে সব বিজ্ঞানের অল্প-বিস্তর সম্বন্ধ রয়েছে। কোনাে বিজ্ঞান মানবপ্রকৃতি হতে যতই দূরে সরে গিয়েছে বলে মনে হয়ে থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত কোনাে না কোনাে পথ ধরে তাকে সেখানে ফিরে আসতেই হয়। এমন কি গণিতশাস্ত্র, পদার্থবিজ্ঞান (Natural Philosophy) এবং যুক্তিবাদী ধর্মতত্ত্ব (Natural Religion) মানবপ্রকৃতির ওপর কতকাংশে নির্ভরশীল। কারণ এগুলাে মানুষের জ্ঞানের মাঝে নিহিত এবং তাদের ক্ষমতা ও মৌলিক মানসিক শক্তি (faculties) দিয়ে এগুলােকে অনুশীলন করা হয়। আমরা যদি মানববুদ্ধির (human understanding) ক্ষমতা ও পরিধিকে সম্পূর্ণরূপে জানতে পারতাম, আর আমাদের ব্যবহৃত ধারণাগুলােকে এবং যুক্তি প্রয়ােগের জন্য নিয়ােজিত ক্রিয়াগুলােকে যদি ব্যাখ্যা করতে পারতাম, তবে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধিত হতাে। যুক্তিবাদী ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে এ উন্নতি বিশেষভাবে আশা করা যায়। কারণ সেখানে একদিকে আমরা বিচারক এবং অন্যদিকে আমরা নিজেরাই বিচারের বিষয়বস্তু। অতিপ্রাকৃত শক্তিগুলাের (superior powers) প্রকৃতি বিচার করেই এ-শাস্ত্র ক্ষান্ত হয় না। আমাদের প্রতি সে-সব শক্তির মনােভাব এবং তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পর্কেও যুক্তিবাদী ধর্মতত্ত্ব আলােচনা করে থাকে। সুতরাং এ-শাস্ত্রে আমরা যে শুধু ন্যায়ানুমান করেই কর্তব্য শেষ করি-- তা নয়। এখানে আমরা নিজেদেরকেও ন্যায়ানুমানের বিষয়বস্তুরূপে পরিগণিত করে থাকি। গণিতশাস্ত্র, যুক্তিবাদী ধর্মতত্ত্ব এবং পদার্থবিজ্ঞান যদি মানুষকে জানার ওপর এতটা নির্ভরশীল হয়, তবে মানবপ্রকৃতির সঙ্গে গভীরতর সম্পর্কে আবদ্ধ অন্যান্য বিজ্ঞানগুলাের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। যুক্তিশাস্ত্রের একমাত্র উদ্দেশ্য আমাদের ন্যায়-ক্ষমতার (reasoning faculty) সূত্রগুলিকে, ক্রিয়াকে এবং আমাদের ধারণাগুলােকে (ideas) ব্যাখ্যা করা। নীতি-দর্শন (morals) এবং সমালােচনাশাস্ত্র আমাদের রুচি ও অনুভূতি নিয়ে আলােচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষকে সমাজে সংঘবদ্ধভাবে এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলভাবে বিচার করে। যুক্তিবিদ্যা বা ন্যায়-শাস্ত্র, নীতি-দর্শন, সমালােচনাশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান-এ চারটি বিজ্ঞানে মানুষের মনের বিভিন্ন দিকের সঙ্গে পরিচয় লাভের এবং সে-সবের উন্নতি বিধানের উপযুক্ত সব বিষয়বস্তুই রয়েছে।