ভূমিকা জনপ্রিয় আমার কয়েকটি বই নিয়ে ইতোপূর্বে যে ‘কিশোর সমগ্র’ প্রকাশিত হয়েছে, বলা যায় তার উত্তরসূরি এই ‘বিজ্ঞান সমগ্র’ যেখানে আমার আরো কয়েকটি বই গ্রন্থিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বিজ্ঞানের নানা অবদান সহজেই ব্যবহার করতে পারদর্শী, যার প্রমাণ এদেশে মোবাইল ফোনের দ্রুত সম্প্রসার। কিন্তু একইভঅবে বিজ্ঞানের নানা আধুনিক ধ্যান-ধারণা সম্বন্ধে আমাদের দেশের মানুষ কতটা সচেতন বা বিশ্বাসী এ নিয়ে আমার মনে ছোটবেলা থেকেই একটা সন্দেহ আছে যা আমি কিছুতেই দূর করতে পারি না। পদার্থবিজ্ঞানের একজন সুপরিচিত অধ্যাপককে আমি বলতে শুনেছি যে শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখা আসলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিশেষ শহরের উপর দিয়ে গেলেই ঠিক হতো কেননা তাঁর ধারণামতো ঐ শহরটি পৃথিবীর কেন্দ্রের ঠিক ওপরে।
পৃথিবী কিনা সমতল এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন অ্যানাক্সাগোরাস নামে বাইশ বছরের এক তরুণ ৪৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। পৃথিবী যে গোলাকার তার চাক্ষুষ প্রমাণ তিনি পেয়েছিলেন ঐ বছরের সূর্যগ্রহণ থেকে। আজকাল আমরা সবাই জানি যে সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে চাঁদ এসে পড়লে ঘটে সূর্যগ্রহণ এবং সূর্য ও চাঁদের মধ্যে পৃথিবী এসে পড়লে ঘটে চন্দ্রগ্রহণ। এভাবেই সৃষ্টি হল গ্রহণের পেনামব্রা। অর্থাৎ গ্রহণের সময় সূর্য বা চন্দ্রের চারপাশে পড়ে আংশিক প্রচ্ছায়া। ঐ সূর্যগ্রহণের সময়ে চাঁদের ছায়াটা গ্রিসের পেলো- পোন্নিজ উপদ্বীপের উপর দিয়েই গিয়েছিল। সুতরাং অ্যানাক্সাগোরাস পিরেইউস বন্দরে গিয়ে নাবিকদের জিজ্হাসা করলেন তারা ঠিক কি দেখেছিল ঐ গ্রহনের সময়ে? তারা সকলেই সূর্যকে একটা চাকতি দিয়ে ঢেকে যেতে দেখেছিল সূর্য গ্রহণের সময়ে।
প্রাকৃতিক প্রতিভাসের পর্যবেক্ষণ, তার কারণ সম্বন্ধে যুক্তিসঙ্গত একটি তত্ত্বের প্রস্তাবনা, তত্ত্ব থেকে নতুন প্রতিভাসের ভবিষ্যদ্বাণী করা এবং সবশেষে আরো অনুরূপ প্রতিভাসে তত্ত্বের যাচাইকরণ এটাই চিরাচরিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বাংলাদেশে এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির শুরু হয়েছিল ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে। প্রায় নব্বই বছরের পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নিবেদিত অনুসারী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন, পাঠন এবং গবেষণা কাজে মোটেই পিছিয়ে থাকেনি। তারই কিছু পরিচয় দেয়ার উদ্দেশ্যেই আমি বাংলায় যেসব প্রবন্ধ বিভিন্ন সময়ে লিখেছিলাম তাই এই সংকলনটিতে একত্রিত করা হয়েছে। প্রবন্ধ সংকলনের প্রেরণা এসেছিল ভ্রাতৃপ্রতিম প্রকাশক শ্রী মিলন নাথের কাছ থেকে এবং আন্তরিক উৎসাহ জুগিয়েছিলেন বন্ধুবর সুব্রত বড়ুয়া। আমি উভয়ের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞ।