যত দিন না ভিনগ্রহের কোনো প্রাণীর সাথে মানুষের দেখা হয়, অথবা একদা-মৃত কোনো মানুষ পৃথিবীতে ফিরে এসে নিজের পরলোক-ভ্রমণ-কাহিনি লিখে উঠতে পারেন। ব্রেখটের গোদোর মতো সেই শুভক্ষণের অপেক্ষা না করে বর্তমান পুস্তকের প্রথম প্রবন্ধে ‘সেমিওলজি’ নামক শাস্ত্রের আলোকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রবন্ধে হিন্দু দর্শনের আলোকে ধর্মের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা আছে। তৃতীয় প্রবন্ধে ইসলামের দৃষ্টিতে ম–র্তিনির্মাণের বৈধতা-অবৈধতার প্রসঙ্গ এসেছে এবং ধর্মান্ধতা ও জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্বের স্বরূপ উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। চতুর্থ প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে কিভাবে বহু প্রাচীন প্যাগান সমাজে প্রচলিত বৃড়্গপ–জা খ্রিস্টীয় ভাবধারার অনুসারী সমাজে ‘খ্রিসমাস ট্রি’ প্রথায় রূপান্ত্মরিত হয়েছে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সমাজেও এই প্রথা ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। পঞ্চম প্রবন্ধে হিন্দু ধর্মের একাধিক ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণে উলেস্নখিত ‘শক্তি’ নামক দেবীর বিভিন্ন জন্ম ও পুনর্জন্মের কাহিনি বৈঠকি ভঙ্গিতে বর্ণনা করা হয়েছে। ষষ্ঠ প্রবন্ধে বাংলাদেশের কোনো এক মাজারে কোনো এক বাবার ওরশের বর্ণনার মোড়কে মানব-মনের বিশ্বাস-বৈচিত্র্যের পক্ষে সযুক্তি সওয়াল উপস্থাপন করেছি। সপ্তম প্রবন্ধে বৈদিক যুগ থেকে সনাতন হিন্দুদর্শনের বিকাশের একটি নাতিদীর্ঘ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ঈশ্বর-ধর্ম-বিশ্বাস কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে বর্তমান পুস্তকে। ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হয়ে থাকেন তবে দড়িতে এমন কোনো গিঁট কি তিনি দিতে পারেন যা তার নিজেরও খোলার ক্ষমতা নেই? ঈশ্বরের কি অতীতকাল পরিবর্তন করার কোনো ক্ষমতা আছে? ঈশ্বর কি সব দেখেন? এই প্রশ্নগুলোতে মানুষের যাবতীয় গুণ, যেমন, ‘পাচার করা’, গিঁট খোলা’, ‘সব দেখা’… ঈশ্বরের উপর আরোপ করা হচ্ছে। ঈশ্বর কাউকে কোথাও পাঠাতে পারেন কি পারেন না, সব দেখার ক্ষমতা আছে কি নেই? এসব প্রশ্ন অবান্তর। আমি যদি বলি, আমাদের ভুলো কুকুরটা ওদের পুসি বিড়ালটাকে ই-মেল করেছে, তবে আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন, কারণ আপনি ভালো করেই জানেন, ভুলো বা পুসির পক্ষে ইলেক্ট্রনিক মেলামেশা সম্ভব নয়। ‘ভুলো’, ‘পুসি’ বা ‘ঈশ্বর’ এরা কেউই মানুষের ক্যাটাগরিতে পড়েন না। সুতরাং মানুষের গুণাবলী এদের কারও মধ্যেই থাকবে না ‒ এটাই স্বাভাবিক। সৃষ্টিশীলতা মানুষের স্বভাবগত একটি গুণ। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর এই গুণটি নেই। মানুষ যখন ঈশ্বরকে ‘সৃষ্টিকর্তা’ বলে তখন সে নিজের সৃষ্টিশীলতার গুণটি ঈশ্বরের উপর আরোপ করে।
শিশির ভট্টাচার্য্য, জন্ম ৪ঠা আগস্ট, ১৯৬৩, চট্টগ্রামের কুমিরা গ্রামে। ভাষাবিজ্ঞানে পি.এইচ.ডি. (২০০৭) করেছেন কানাডার মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্যারিসের সর্বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞানে এম.ফিল. (১৯৯৫) ও এম. এ. (১৯৯৪) এবং ইন্ডোলজিতে এম. এ. (১৯৮৮) করেছেন। পোস্টডক্টরেট গবেষণা করেছেন টোকিওর রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউটে এবং ওসাকার কানসাই গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আগ্রহের বিষয় ভাষা ও ব্যাকরণ, সাহিত্যের অনুবাদ, সমাজ, মহাকাব্য ও ইতিহাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে অধ্যাপনা করছেন ১৯৮৯ সাল থেকে। প্রিয় অবসরকর্ম: গল্প বলা ও শোনা, চঁহ ও কৌতুকচর্চা করে জমিয়ে দুবেলা সহাস্য আড্ডা দেওয়া।