ফ্ল্যাপে লিখা কথা দেশের রাজনৈতিক দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতালোভী জান্তারা দখল করে রাষ্ট্রক্ষমতা। এরপর শুরু হয় দেশজুড়ে সামরিক কায়দায় অত্যাচার আর নৈরাজ্যের হোলিখেলা। লুটপাট আর দখলদারিত্বে বিগত সময়ের সকল সরকারকে যেন এই জান্তা সরকার হার মানায়। দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। দেশ পরিণত হয় এক নরকে। দেশের মানুষ ক্রমেই উপলব্ধি করতে থাকে জংলি ছাপার পোশাকের অন্তরালের মানুষগুলোর পাশবিক চরিত্র। অথচ এ দেশের মানুষের রক্ত পানি করা আয়ের সবচেয়ে বড় অংশই কিনা বরাদ্দ হয় এদের জন্য। দেশের এমন পরিস্থিতে একটি নুতন সকালের স্বপ্ন নিয়ে একদল তরুণ শুরু করে দেশ মাতাকে উদ্ধারের যুদ্ধ। এ যুদ্ধ প্রতিরোধের নয়, অবৈধ জংলি পাশবিক শক্তিকে প্রতিহতের। নিরস্ত্র একদল তরুণের পক্ষে কতটা যুদ্ধ করা সম্ভব একটি সুশৃংখল প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিপক্ষে। তারা কি পারবে দেশমাতাকে উদ্ধার করতে? পারবে কী নতুন সকালের দেখা?
ভূমিকা আমাদের দেশে একটি প্রচলিত কথা আছে তা’হলো ‘এদেশে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি’। এটা কবিদের সম্পর্কে যারা বলেন, জানিনা তারা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বলেন, নাকি নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে বলেন। তবে আমি মনে করি শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চা যেকোন জাতির জন্যই মঙ্গলজনক। তবে একজন পাঠক হিসেবে আমার সবসময় মনে হয় আমাদের দেশে ব্যতিক্রমী, সাহসী, জ্ঞানী, অনুসন্ধিতসু সাহিত্যিকের সংখ্যা তুলোনামূলক কম। যারা দেশের মানুষকে অর্থাৎ পাঠকদের নিয়ে যাবেন নান্দনিক বৈচিত্রময়, কঠিন বাস্তবতা, সভ্যতার ক্রমবিকাশ, দর্শন এবং জাগতিক-মহাজাগতিক পরিমণ্ডলে। আর প্রস্তুত করবেন জীবনের প্রতিটি যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে। নিজেকে ভাঙতে, গড়তে। একজন পাঠক হিসেবে আমি প্রতিনিয়ত অভাববোধ করি ড. আহমদ শরীফ, আরজ আলী, আহমদ সফা, হুমায়ুন আজাদের মতো লেখকের। দেশের আর্থ-সামজিক, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রতিটি ক্ষণেই আমার মনে হয় এই সময়ে এদেশের জন্য তাদের প্রয়োজন। তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমেই ঘটবে বিপ্লবের সূচন। অবশ্য এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। ছেলেবেলায় শুনেছিলাম শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক হতে হলে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হয়, থাকতে হয় প্রখর কল্পনা শক্তি। লিওনার্দ দ্যা ভিঞ্চির কাল্পনিক ছবি থেকেই পরবর্তীতে বিমান তৈরি হয়েছিল। কবি নজরুল চল্লিশের দশকেই ভেবেছিলেন মানুষ একদিন মঙ্গল জয় করবে। এগুলোকে ইংরেজিতে বলা হয় ইমাজিনেশন। কিন্তু পাঠক হিসেবে বর্তমান সময়ের অনেক লেখকের লেখায় চরম কল্পকাহিনী, নিঠুর বাস্তবতা, অথবা কঠিণ সত্য প্রকাশের অনিহা দেখতে পাই। সবাই কেমন গাঁ বাঁচিয়ে কবি-সাহিত্যিক হতে চান। অনেককে দেখি ক্ষমতাসীনদের তেল দিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু দেশ ও দেশের মানুষকে জাগাতে, পঠকের মন-প্রাণ ভরিয়ে তুলতে নি:সঙ্কচিত্ত কবি, সাহিত্যিক কই? এমন এক লুকোচুরি সময়ে একটি কঠিন অথচ সময়ের সাথে সঙ্গতীপূর্ণ বিষয়ে উপন্যাস রচনা করেছেন নবীন লেখক আহমেদুর রহমান। এটিই তার প্রথম রচনা। এখানেই তিনি আমাদের দেশের বিভিন্ন সমায়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে এক কল্পবাস্তবিক দৃশ্যপট চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন। পাণ্ডলিপি পাঠে আমার এমনটিই মনে হয়েছে। ইতপূর্বে এ ধরনের সাহিত্য সৃষ্টির কারণে অনেকের ভাগ্যে রাজদ্বণ্ড জুটেছিল। একজন নবীন লেখক হিসেবে এবং জীবনের প্রথম উপন্যাসে এমন জটিল বিষয় নিয়ে লেখার প্রয়াসকে দু:সাহস বল্লেও অত্যুক্তি হবে না। একজন পাঠক হিসেবে অনুজপ্রতিম আহমেদুর রহমান’র লেখা উপন্যাস ‘নতুন সকাল’ আমাকে আশান্বিত করেছে, জাগ্রত করেছে। ভীতু সন্তস্ত্র মনে সাহসের সঞ্চার করেছে। আশাকরি ‘নতুন সকাল’ উপন্যাসটি ভিন্নধর্মী পাঠকদের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নেবে। রাশেদ রাব্বি গণমাধ্যম কর্মী
লেখক পরিচিতি আহমেদুর রহমান (নিপুন), ১৯ আগস্ট ১৯৮৭ইং টাংগাইল সদর উপজেলার খুদিরামপুর গ্রামের এক সাহিত্যানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেণ। বাবা মোঃ নওজেশ আলী মা মিসেস মরিয়ম নওজেশ এর পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ। বড় বোন নাসরীন রশীদ সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক। ছাত্র জীবন থেকেই সাহিত্য চর্চায় সম্পৃক্ত থাকলেও ‘নতুন সকাল’ লেখকের প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস। টাংগাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি ও সরকারী এম.এম. আলী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এরপর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ‘দৈনিক মানবকণ্ঠে’ যোগ দেন। কিন্তু চাকুরিতে মন টেকেনি বেশিদিন। চাকুরি ছেড়ে পারিবারিক ব্যাবসা আর লেখা-লেখিতে মনোনিবেশ করেন। তারই প্রথম প্রচেষ্টা ‘নতুন সকাল’। আলোকচিত্র- শেখ জাহাঙ্গীর আলম