ভূমিকা আমার বাবা, কিছু স্মৃতি, কিছু বিস্মৃতি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং খ্যাতিমান সাহিত্যিক আমাদেরই বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার জোয়াড়ী গ্রামের বিখ্যাত জমিদার পরিবারের সন্তান প্রমথনাথ বিশীর(১৯০১-১৯৮৫) জীবনে বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জি নিয়ে ইতঃপূর্বে অশ্রুত স্মৃতিচারন-যা লিখেছেন তাঁরই আদরিণী জ্যেষ।ট কন্যা চিরশ্রী বিশীচক্রবর্তী -যিনি নিজেও পিতার মতই সাহিত্যপ্রাণা এবং শিক্ষাবিদও বটে। গ্রন্থটি নাটকীয়ভাবে শুরু হয়েছে তাঁর পিতার অন্তিম মুহূর্ত নিয়ে-তারপর চিত্রায়ণের মতই এসেছে একেকটি দৃশ্য বা ঘটনা-যা সুখপাঠ্য এবং পাঠক-পাঠিকাদের টেনে নিয়ে যায় পরবর্তী দৃশ্যের বার্তা শোনাতে এবং সম্ভবত দেখাতেও। আমাদেরই বর্তমান বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি পরিবারের সদস্য-যিনি বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তি পুরুষ-তাঁর উপর লিখিত ‘স্মৃতি-বিস্মৃতির কথা’ বাংলাদেশ থেকেই প্রকাশিত হয়েছে-এটাও আমাদের এবং তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্র হিসাবে আমারও পরম আত্মতৃপ্তির বিষয়। এজন্য ঢাকার বিদ্যাসাগর সোসাইটির মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হাই-এর কাছেও কৃতজ্ঞ। শান্তিনিকেতনে ছাত্রাবস্থায়(১৯৪৫-৪৮) আমরা তাঁর লিখিত সুখপাঠ্য স্মৃতিচারণ রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতেন পাঠ করে আনন্দ পেয়েছি এবং এই বহুল পঠিত গ্রন্থটির প্রভাবেই লিখিত হয় আমার রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন(১০ম সং, ২০০১)। যাতে আনন্দবাজার পত্রিকার কার্ডে আমাকে লিখিত একটি পত্রও সংকলিত হয়েছে। আমার অন্য গ্রন্থ যাঁদের দেখেছি গ্রন্থেও(৫ম সং, ২০০২) তাঁর কথা আছে-তিনি রিপন কলেজে তখন (১৯৪৪-৪৫) কিভাবে আমাদের বাংলা পড়াতেন-তাঁর ক্লাশগুলি কেমন আকর্ষণীয় ছিল তারও বর্ণনা আছে। সব্যসাচী এই লেখকের গ্রন্থবলীর মধ্যে-রবীন্দ্র কাব্য প্রবাহ, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প, রবীন্দ্র সাহিত্য বিচিত্রা, রবীন্দ্র স্মরণী, রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন, বঙ্কিম স্মরণী, মাইকেল মধুসূদন ইত্যাদি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর বহুল পঠিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে-জোড়াদীঘির চৌধুরী পরিবার, অশ্বত্থের অভিশাপ, লালকেল্লা, বঙ্গভঙ্গ, কেরী সাহেবের মুন্সী ইত্যাদি। গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-শ্রীকান্তের পঞ্চম পর্ব, ষষ্ঠ পর্ব, অশরীরী, গল্পের মতো, গালি ও গল্প, ধনেপাতা, ব্রহ্মার হাসি ইত্যাদি। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে-দেয়ালী, বিদ্যাসুন্দর, প্রাচীন আসামী হইতে, যুক্তবেণী, হংস মিথুন, উত্তর মেঘ ইত্যাদি। প্রমথনাথ বিশীকে নিয়ে উভয় বঙ্গেই বহু আলোচনা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। হয়তো তাঁর বিচিত্রমূখী সাহিত্য সাধনার উপর কোন গবেষক ডক্টরেট পর্যায়েও কাজ করবেন। এই স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে কিন্তু ভূমিকা লেখকের সে সুযোগ সীমিত। আমরা বাংলাদেশের পাঠক-পাঠিকাদের এই সুখপাঠ্য গ্রন্থটির জন্য আমাদেরই কন্যা চিরশ্রী বিশীচক্রবর্তীকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে প্রকাশন ও সংশ্লিষ্টি অন্যান্যদেরও। আশরাফ সিদ্দিকী
চিরশ্রী বিশী (চক্রবর্তী) প্রয়াত প্রমথনাথ বিশীর একমাত্র কন্যা। লেখাপড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বি.এ. (বাংলা অনার্স)। ১৯৬১, এম.এ. ১৯৬৩, অধ্যাপিকা : লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজ ১৯৬৪, রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ ফেলো (১৯৬৪-৬৭), পি.এইচ.ডি. (ডঃ সুকুমার সেনের তত্বাবধানে) ১৯৭০, ডি.লিট. ১৯৮৫, অধ্যাপিকা লেডি শ্রীরাম কলেজ ১৯৬৭-২০০৪, নিউ দিলী। “প্রতীচী” নামক প্রথম আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য পত্রিকার মুখ্য সম্পাদক – ২০০৪ থেকে অধুনাতম। মুদ্রিত গ্রন্থাবলী: ১। কাব্য প্রতিধ্বনি, ২। প্রতিভাস, ৩। তিজোরী, ৪। অন্যভূবন, ৫। একাঙ্ক চিরশী (নাটকগুচ্ছ), ৬। নিজের জন্য বাঁচা। ৭। অনিচ্ছুক ভ্রমণকারীর ডায়েরী ১ম খন্ড, ৮। অনিচ্ছুক ভ্রমণকারীর ডায়েরী ২য় খন্ড (যন্ত্রস্থ), ৯। অনিচ্ছুক ভ্রমণকারীর ডায়েরী (কফি টেবল বুক), ১০। রবীন্দ্র গদ্যভাষার বিবর্তন। ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে ১। আমার বাবা কিছু স্মৃতি কিছু বিস্মৃতি। ২। হারার পাখী। ৩। শেষ নাহি যে। ৪। আমার একটি কথা।