নাট্যকর্মী ও নাট্যামোদীদের শুভ কামনা নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম নাটকের পত্রিকা থিয়েটার আত্মপ্রকাশ করলো। এ ধরনের একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা আমরা অনেকদিন ধরেই অনুভব করছিলাম। এখন আমরা আশা করি আমাদের নাট্যকর্মীদের সাম্প্রতিক ভাবনা চিন্তা থিয়েটার পত্রিকার মাধ্যমে সাধারণ্যে উপস্থাপিত করা সম্ভব হবে। প্রথম সংখ্যা প্রকাশের এ শুভ লগ্নে আমাদের আকাঙ্ক্ষা-বাংলাদেশে আরো নাটকের পত্রিকা প্রকাশিত হোক। মুনীর চৌধুরী আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতিতে একটি অবিস্মরণীয় প্রতিভা। আমাদের দেশে আধুনিক নাটকের তিনিই জনক। রাজার জন্মদিনে নাটিকায় মুনীর চৌধুরীর যে নাট্য প্রতিভার প্রকাশ ঘটেছিল, তা সার্থকতার সোপান বেয়ে বিকাশের এক পরিণত স্তরে পৌঁছেছিল ওথেলোতে। তাঁর এই উত্তরণ সাথে সাথে আমাদের নাট্য সাহিত্যকে সমৃদ্ধশালী করেছে। কিন্তু আমাদের চরম দুর্ভাগ্য, যখন তাঁর রচনার শ্রেষ্ঠ ফসল আমরা লাভ করতে পারতাম, ঠিক তার পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। অনেক ক্ষতিই হয়তো আমাদের পূরণ হবে, কিন্তু এ কথা বিনা দ্বিধায় বলা যায়-বাংলাদেশে মুনীর চৌধুরী আর জন্মাবেন না। অদ্যাবধি আমাদের সাহিত্যে মুনীর চৌধুরী সর্বাপেক্ষা প্রতিভাবান নাট্যকার। সঙ্গত কারণেই থিয়েটার পত্রিকার প্রথম সংখ্যা মুনীর চৌধুরী স্মারক সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হলো। তাছাড়া এ পত্রিকার উদ্যোক্তাদের এটি একটি নৈতিক দায়িত্বও। কারণ তাদের অভিনয় জীবনের প্রায় সবটা শিক্ষাই মুনীর চৌধুরীর।
জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ পাস করার পর পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অধ্যাপনাকে। পরবর্তীকালে বিজ্ঞাপনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন, কাজ করেন করাচি ও নয়াদিল্লিতে এবং ১৯৭২ থেকে ঢাকাতে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এ দেশের প্রথম নাটকের পত্রিকা থিয়েটার প্রকাশ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যগোষ্ঠী ‘থিয়েটার’। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে নাটক করেছেন, দীর্ঘদিন সংবাদ পাঠ করেছেন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই)র বাংলাদেশ কেন্দ্র ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আইটিআই-র বিশ্ব সভাপতি ছিলেন ছয় বছর, বর্তমানে সাম্মানিক সভাপতি। বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে লাভ করেছেন একুশে পদক ও বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য।