কি যেন এক সরকারি ফর্ম পূরণ করছি। ৪ পৃষ্ঠার লম্বা ফর্ম। নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা… নানা বিতং…. আমি সম্পূর্ণ নিজের অজান্তে স্থায়ী ঠিকানার জায়গায় লিখে দিলাম, ফেসবুক। আসলেই আমার স্থায়ী এবং বর্তমান দুটো ঠিকানাই হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুককে আমি যে পরিমাণ সময় দেই, তার দশ ভাগের এক ভাগ সময় যদি আমার প্রেমিকাকে দিতাম, তাহলে তিনি শত সন্তানের জননী হতেন… কিংবা সেই সময় আমার স্ত্রীকে দিলে তার চোখে আমি হতাম শত বর্ষের শ্রেষ্ঠ স্বামী সেই সময় পড়াশোনায় দিলে পুরো টেলিফোন ডিরেক্টরি মুখস্থ বলতে পারতাম। সেই সময় লেখালেখিতে দিলে, তিনটি গীতাঞ্জলি দুটো সঞ্চয়িতা এবং চারটি গল্পগুচ্ছ লেখা হয়ে যেতো। সেই সময় ঈশ্বরকে দিলে, স্বয়ং ঈশ্বর এসে ধরা দিতেন আমার সামনে… এই ফেসবুক হয়তো চিরদিন থাকবে না। সময়ের প্রয়োজনে নতুন কিছু এসে ফেসবুকের জায়গা দখল করবে। কিন্ত পরিবার পরিজন, বাচ্চা স্ত্রী এমনকি প্রেমিকাকে ফেলে যে পরিমাণ সময় আমি ফেসবুককে দিয়েছি তার একটা রেকর্ড থাকা দারকার। বইটা এই কারণে করা। যাতে ইতিহাসে লেখা থাকে, এক যে ছিল ফেসবুক, তাকে ভালোবাসতো রবি…. গরীবের আল্লাহ আর ফেসবুক ছাড়া কিছুই নাই। সবার জীবন লাইকময় হোক
Ashif Entaz Rabi জন্ম ২১ আগস্ট ১৯৭৭। তবে অন্য অনেকের মতো আমারও একটা সার্টিফিকেট জন্মসাল আছে, ২৪.১০.১৯৭৯। নটরডেম কলেজে পড়ার সময় জনৈক বালিকাকে মুগ্ধ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছিলাম। একদিন জলসিঁড়ি নামক উপন্যাসটি সেই বালিকাকে দ্রবীভূত করতে পারেনি। লেখক হিসেবে সেই দিন থেকেই আমি ব্যৰ্থ। ব্যৰ্থতাকে সহজভাবে মেনে নিয়ে আমি অন্য কাজকর্মে মনোনিবেশ ফেলি। সংসার চালানোর জন্য টিউশনির চেষ্টা করি। একটা টিউশনি জুটেও যায়। ছাত্র ইন্টারমিডিয়েটে বিজ্ঞানবিভাগে পড়ে। প্রথম দিন তাকে নিউটনের গতিসূত্র বোঝাই। মাস্টার হিসেবে আমি কেমন এটা পরখ করার জন্য ছাত্রের বাবা পাশে বসে ছিলেন। ছাত্রটি নিউটনের গতিসূত্র চমৎকারভাবে ধরে ফেললেও তার ক্লাস এইট পাশ বাবা ব্যাপারটার আগামাথা কিছুই বুঝলেন না। কাজেই প্রথমদিনেই টিউশনি থেকে বাদ পড়ে গেলাম। এরপর শুরু করলাম পত্রিকায় লেখালেখি। শুধু টাকার জন্য প্রথম আলো পত্রিকায় দুই হাতে লেখা শুরু করলাম। সেই লেখালেখির জেরেই যুগান্তর পত্রিকায় চাকরি পেয়ে যাই কের। টানা ১৩ বছর সেখানে সাংবাদিকতা করি। যুগান্তরে থাকার সময় জনৈক প্রকাশক আমার সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি আমার একটি বই বের করতে চান। পুরনো ব্যর্থতার কথা ভুলে আমি বই বের করতে রাজি হয়ে যাই। চার মাস ঘুরানোর পর চারটি ছোট গল্প তার হাতে তুলে দেই। প্রকাশক বিরস বদনে বলেন, এইটুকু দিয়ে তো দুই ফর্মও হবে না। প্ৰকাশককে উদ্ধার করার জন্য আমি আরও দুইজন তরুণ লেখককে জোগাড় করি, যারা লম্বা লম্বা গল্প লিখতে পারেন। তিনজনের বারোটি গল্প মিলে বের হয়, তিন তরুণের গল্প। এরপরের বছর একই কায়দায় ত্রয়ী নামে আরেকটি গল্পগ্রন্থ বের হয়। আশ্চর্যজনকভাবে প্রথম বই তিন কপি, দ্বিতীয় বইটিও সর্বমোট তিন কপি বিক্রি হয়। লেখক তিনজন থাকায় এই দারুন সাফল্য। তিনে মিলে করি কাজ, হারিজিতি নাহি লাজ। এরপর টানা আট বছর আমি কোনো বই ফাঁদার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। তবু স্বভাবদোষে বের হলো, কাগজের নীেকা। এখন নৌকাডুবির অপেক্ষা। লেখক পরিচিতিতে ভালো ভালো কথা লেখার নিয়ম। অধিকাংশক্ষেত্রে লেখক নিজেই নিজের ঢোল ফাটিয়ে ফেলেন। আমার কোনো ঢোল নেই, তাই ফাটাতে পারলাম না। আমি দুঃখিত।