গ্রিক পুরাণ হলো প্রাচীন গ্রিসে রচিত সে দেশের দেব-দেবী ও বীর যোদ্ধাদের কাহিনিসংবলিত পুরাণকথা ও কিংবদন্তি সংক্রান্ত আখ্যানমালা। এ গল্পগুলোতে বিশ্বপ্রকৃতি এবং গ্রিকদের নিজস্ব সংস্কৃতি, প্রথা ও রীতি-নীতির উদ্ভব ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এগুলো প্রাচীন গ্রিসের ধর্মীয় সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়। ‘মাকড়শার জন্মবৃত্তান্ত’ তেমনই একটি গ্রিক পুরাণের গল্প। আসাদ চৌধুরীর অনুবাদে গল্পের বইটি প্রকাশিত হয়েছে ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে। বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে। মাকড়শা এমন একটি প্রাণী, যারা প্রত্যেকেরই ঘরে ঘরে থাকে। মাকড়শারা শিকার ধরার জন্য দেয়ালের কোণে জাল বোনে আর সেই জালে যখন পোকা পড়ে অমনি তারা সেই পোকা খেয়ে ফেলে। এই মাকড়শাদের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে রয়েছে গ্রিক পুরাণের গল্প। গ্রামের শান্তশিষ্ট মেয়ে আরাকান। সে খুবই গরিব। পাহাড়ের নিচে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে সে একাই বাস করে। তাঁতে বুনতে খুবই পছন্দ করে। সে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে। কাঁটাওয়ালা ঝোপজঙ্গলে লেগে থাকা ভেড়ার পশম তোলে। ঘরে ফিরে ফুল নিংড়ে রং তৈরি করে। গ্রামের গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য আরাকান টুপি, চাদর এসব বুনে দেয়। তারা আরাকানকে এ জন্য খুবই পছন্দ করে। কিন্তু একজন আছেন, যিনি আরাকানকে একদমই পছন্দ করেন না। তিনি হলেন দেবী এথেনা। একদিন দেবী এথেনা আরাকানের ঘরে এসে তাঁত আর তার বোনা কম্বল নষ্ট করে ফেলেন। এতে আরাকানের খুব কষ্ট হয়। এমনকি এই দুঃখে সে অসুস্থ হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। গ্রামের সবাই হাহাকার করে তার জন্য। একসময় দেবী এথেনা তার ভুল বুঝতে পারেন। তিনি ছোট্ট কাচের শিশি থেকে কয়েক ফোঁটা ???---??? তার শরীরে ছিটিয়ে দেন। এর পরের ঘটনা পড়তে পারবে বইটিতে। চমৎকার এই গল্পটি পড়তে পড়তে আরাকানের জন্য তৈরি হবে গভীর ভালোবাসা। আমাদের চারপাশের জগতে এমন অনেক প্রাণী আছে। আছে তাদেরও হয়তো এমন জন্মবৃত্তান্তের গল্প। গল্প যেমনই হোক, সহজ-সরল ভাষায় সেটা লেখা হলে শিশু-কিশোররা সহজেই পড়তে পারে। এসব রূপকথা, উপকথা আর পুরাণের গল্প পাঠের মধ্য দিয়ে অনেক অদ্ভুত সব বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। গল্পের সাথে সুন্দর ছবিও রয়েছে বইটিতে।
আসাদ চৌধুরী। জন্ম ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩, উলানিয়া, বরিশাল। বাংলাদেশের কবিতায় ‘তবক দেওয়া পান’ নিয়ে আসাদ চৌধুরীর আর্বিভাব। স্বল্পবাক, ঋজু এবং বক্তব্য প্রকাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিকীর্ণ এই কবি, বাংলাদেশের ষাট দশকের কবিতায় সংযোজন করেছেন নতুন মাত্রা। এ মাত্রা লক্ষণীয় তাঁর ভাষা ও প্রকরণে; যেখানে তিনি ঐতিহ্য, শে¬ষ, প্রেম, সৌন্দর্য ও মরমি চেতনার সংমিশ্রণ ঘটান। আসাদ চৌধুরী, তাঁর কবিতায় মরমি-মানসিকতা নিয়ে বাঙালি জাতির ঐতিহ্যকে অনুসন্ধান করেছেন। আর তাই ছন্দে মেজাজে এবং বক্তব্যে তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় এক যুগ সময়। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এবং জয়বাংলা পত্রিকায় কাজ করেন। জার্মানির কোলনের ভয়েস অব জার্মানির বাংলা বিভাগের বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন (১৯৮৫-৮৮)। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন প্রায় ছাব্বিশ বছর। আসাদ চৌধুরী কবিতা আবৃত্তি করেন। বেতার টিভিতে উপস্থাপনা করেন। প্রচুর নাটক সিনেমা দেখেন। ভ্রমণ তার নেশা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোতেই তার আনন্দ। সব বয়সী পাঠকের জন্য কবিতা, প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি বিশেষভাবে ছোটদের জন্য লিখেছেন ছড়া-কবিতা, রূপকথার গল্প, অনুবাদ এবং জীবনীগ্রন্থও। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৭), অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক (২০১৩) সহ অসংখ্য পুরস্কার। সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল চির তারুণ্যের প্রতীক আসাদ চৌধুরী ছোট বড় সকলেরই প্রিয় মানুুষ।