বাঙালি জাতি তার জাতিসত্তার পরিপূর্ণতার জন্য রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে ইতিহাস সৃষ্টি করে, আমাদের জন্য তা সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের চালিকা শক্তি। বিশেষ করে ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম, বর্ণ, জাত, পাত নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা, প্রগতিশীল সমাজ, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি, লৈঙ্গিক ও শ্রেণি বৈষম্য দূর করা আমাদেনর মূল লক্ষ্য। এই জন্যই আমরা অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, শ্রেণি ও বৈষম্যমূলক পাকিস্তানি জাতি ও সমাজ চেতনাকে প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের-বিরোধী চিহ্নিত মহলটি আজ পর্যন্ত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা মেনে নিতে পারেনি। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নি সংযোগের মতো মানবতা-বিরোধী অপরাধের প্রত্যক্ষ অংশীদার চক্রটি আজ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে বাঙালি জাতিসত্তাকে মেনে নেয়নি। বিপরীতে ঐ চিহ্নিত গোষ্ঠীটি নানাভাবে বিকৃত পাকিস্তানি চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। ’৭১-মানবতা-বিরোধী অপরাধে অপরাধী এ দেশের পাকিস্তানিদের দালাল, আল-বদর, আল-সামস্, রাজাকার বাহিনীর সদস্য এবং মূল হোতাদের বিচার আজ পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়নি। অথচ এই বিচারের দাবিটি গণদাবি।