বৈশাখের বৃষ্টিহীন দগ্ধ বিকেলে মিন্টু রোডে ঢুকতেই শীতল বাতাস ভালোই লাগছিল। ভালো লাগার পরশে ছুঁয়ে গেলো সারা মন। দু'ধারে উঁচু উঁচু গাছ, সবুজ পাতায় ভরা। তারই মাঝে থেকে থেকে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল এমনভাবে ফুটে আছে, মনে হলো স্বাধীনতার লাল খচিত সবুজ পতাকা আকাশে পত্পত্ করে উড়ছে। শহরের বিষাক্ত বাতাসের সন্নিকটে কৃত্রিম এই পরিবেশের ভেতর এসেই কবির এই পঙ্ক্তিগুলো মনে পড়লো। 'বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস' পত্রিকার পক্ষ থেকে সম্পাদক, এম. হেলাল সহকর্মী - বাবুল রানাসহ গিয়েছিলাম একজন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকের বাড়ি। (যিনি মন্ত্রীর পরিচয়ের চেয়ে শিক্ষক পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বেশি।) তিনি দূরের কেউ নন, আমাদের সকলের অত্যন্ত কাছের, ভার্সিটি ক্যাম্পাসের দলমতের ঊর্ধ্বে সকল ছাত্রের প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। যিনি বর্তমানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। মূলত, শিক্ষাঙ্গন বিষয়ে আমরা খোলামেলা আলোচনায় অংশ নেই তার সাথে। তিনি আলোচনা করতে গিয়ে বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে যাচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল এ আলিশান বাড়ির রাজকীয় পরিবেশে তিনি হাঁফিয়ে উঠছেন ক্রমশ। তিনি যেন ফিরে যেতে চান ক্যাম্পাসে কোলাহলমুখর, ছাত্র-ছাত্রীদের হৈচৈ, স্লোগানে স্লোগানে ক্লান্ত দেহে ফিরে আসা ঘামে ভেজা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৪৬ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্ব বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেমায় যোগদান করেন। একই বছর ‘কলম্বো প্লান স্কলারশীপ’ লাভ করে উচ্চ শিক্সার জন্য লন্ডন গমন করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে তিনি ১৯৭০ সালে এমএসসি, ১৯৭৩ সালে ডিআইসি এবং ১৯৭৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। উচ্চ শিক্ষা লাভ করে ১৯৭৫ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক, ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক এবং ১৯৮৭-১৯৯০ মেয়াদে ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শিক্ষাজীবনে ছাত্র-রাজনীতিতে সত্রিয় ছিলেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রসংসদের নির্বাচিত এজিএস এবং হাজী মোহাম্মদ হমসিন হল ছাত্রসংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বয়াক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে এবং তাঁর আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন এবং অদ্যাবধি এই পদে বহাল আছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জেনেভায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালে ৫৬ তম বিশ্বস্বাস্থ্য সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অসাধারণ ভূমিকার জন্য ৫৬ তম বিশ্বস্বাস্থ্য সম্মেলনে তাঁকে `World No Tobacco Award’ এ ভূষিত করা হয়। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশ ও বিদেশের বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ভূতত্ত্ব ভিষয়ে তাঁর একটি মৌলিক উদ্ভাবন `Hossain’s Method of Extension’ নামে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।