ফ্ল্যাপে লিখা কথা ১০৯৫ সালে পোপ দ্বিতীয় আরবানের আহবানে সূচিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় ক্রুসেডের। পরিত্র ভূমি জেরুজালেম তথা পবিত্র সেপালচার উদ্ধারের নামে ইউরোপ থেকে আগত সশস্ত্র ক্রিশ্চান বাহিনী মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দিয়েছিল কয়েক শতাব্দী ব্যাপী রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ। অপেক্ষাকৃত আধুনিক মারণাস্ত্র সজ্জিত ক্রিশ্চানদের কাছে পরাস্ত মুসলিম জাতি হারিয়ে যেতে বসেছিল বিস্মৃতির অতলে। এমনি অবস্থায় নতুন উদ্দীপনা নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে হাজির হলেন বীর কুর্দ সালাদিন আইয়ুবী এবং তার হাতে শুরু হল মুসলিম বিজয়ের এক নতুন অধ্যায়। পবিত্র জেরুজালেমসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হল ত্রিশ্চানরা। দীর্ কয়েক শতাব্দী ধরে অব্যাহত ছিল এই সংঘাত। আক্রমণ, পাল্টা, আক্রমণের ভেতর দিয়ে পেরিয়ে গেঠেছ অনেক প্রজন্ম। এক সময় রাজাদের হাত থেকে যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ সরাসরি নিজ হাতে তুলে নেন ক্ষমতা লিপ্সু পোপগণ, আপন জাতির বিরুদ্ধেই পরিচালিত করেছেন তাঁরা ক্রসেডের শক্তিকে। পরিণামে ক্রিশ্চানদের রক্তেই রঞ্জিত হয়েছে ত্রুসেডের তলোয়ার।
বিশিষ্ট আবর বিশেষজ্ঞ হ্যারল্ড ল্যাম্ব বর্তমান গ্রন্থে সেই ইতিহাসই তুলে এনেছেন। ত্রুসেডের সমস্ত চরিত্রই এখানে তাদের আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপস্থিত রয়েছেন। এখানে দূর করা হয়েছে ক্রুসেড নিয়ে প্রচলিত অনেক মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত কাহিনীর। তুলে ধরা হয়েছে নেপথ্যের প্রকৃত ঘটনা। ফলে এটি পরিণত হয়েছে ক্রুসেড সংক্রান্ত একটি আকর গ্রন্থে।
হ্যারল্ড ল্যাম্ব । জন্ম ১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯২। তিনি ছিলেন একাধারে। ইতিহাসবিদ, চিত্রনাট্যকার এবং ঔপন্যাসিক। নিউ জার্সির আল পাইন এ জন্ম নেয়া মানুষটি খুব অল্প বয়সেই লেখালেখিতে আসেন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় এশিয়া এবং এই এলাকার মানুষের ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পাল্প ম্যাগাজিন জাতীয় পত্রিকা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এক সময় সম্মানজনক অ্যাডভেঞ্চার পত্রিকায়। যােগ দেন। ১৯২৭ সালে তাঁর লেখা চেঙ্গিস খানের জীবনী দারুণ সাফল্য এনে দেয়। এরপরে ১৯৬২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বেশ অনেকগুলাে জীবনী এবং ইতিহাসভিত্তিক বই রচনা করেন। ক্রুসেডের ওপর লেখা তার দুই খণ্ডের বইটি দারুণভাবে প্রশংসিত হয়। এর সুবাদে সেসিল ডে মেইল, ক্রুসেড’-এর ওপর নির্মিতব্য তার চলচ্চিত্রে তাঁকে টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নিয়ােগ করেন। এরপরে তিনি বেশ অনেকগুলাে চলচ্চিত্রে নাট্যকার হিসেবেও কাজ করেন। ইংরেজির। পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ, ল্যাটিন, পার্সি আর আরবি ভাষায়ও পারদর্শী ছিলেন। ১৯৬২ সালের ৬ এপ্রিল এই মহান ইতিহাসবিদ, লেখক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।