বিখ্যাত বাবাদের নিয়ে সন্তানদের স্মৃতিকথা দুর্লভ নয়। কিন্তু রবীন্দ্রপুত্র রথীন্দ্রনাথ যত দীর্ঘকালব্যাপী পিতাকে কাছ থেকে দেখেছেন, এমনটি আর কোনো সন্তানের ক্ষেত্রে ঘটেনি। প্রায় ৫০ বছর তিনি পিতার সঙ্গেই ছিলেন। সময়ের দাবিতে এ বই কেবল পুত্রের স্মৃতিকথা নয়, বরং খুব কাছ থেকে রবীন্দ্রনাথের মতো মহীরুহের অবয়ব উন্মোচন। সারাজীবন মৃত্যুর পর মৃত্যুর ঘা সওয়ার পরও কবি কেমন করে স্থির থাকলেন, এত বিপুল রচনা রেখে যেতে পারলেন? তাঁর সাহিত্যভাণ্ডার কি জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন? কোন্ প্রেক্ষাপটে তাঁর বিখ্যাত ছোটগল্পগুলো লেখা হয়েছিল? তাঁর নাটক আর কাব্যনাট্যের উৎস কী এবং গোড়ার দিকে সেগুলোর অভিনয় হত কেমন করে? ১৯১২ সালের ইংল্যান্ড সফর কীভাবে বদলে দিয়েছিল কবির জীবন? কী ঘটেছিল সেই সফরে? গীতাঞ্জলির পাণ্ডুলিপি কেমন করে হারিয়ে গিয়েছিল, আবার সেটা পাওয়াইবা গেল কেমন করে? যে রবীন্দ্রনাথ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর নাইট উপাধি ত্যাগ করেছেন, ১৯০৫ সালে যিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরবর্তীতে তাঁর পথ প্রধান রাজনৈতিক স্রোত থেকে পৃথক হয়ে গেল কেন? কেমন ছিল শান্তিনিকেতনের শুরুর দিনগুলো? কারা এর প্রথম দিককার শিক্ষক ছিলেন আর শিক্ষাদান পদ্ধতিই বা কেমন ছিল? কেমন ছিল অবনীন্দ্র আর গগনেন্দ্রের শিল্পী-জীবন। রবীন্দ্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে এ স্মৃতিকথায়। মিলবে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্ব আর তাঁর কর্মের অন্তরঙ্গ বিশ্লেষণ। রথীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে গেলে এ বই থেকে ‘পাঠক হয়ত আমার বাবার ব্যক্তিত্বের এমন কিছু দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন, তাঁর জীবনীকারগণ যেসকল বিষয়ে আলোকপাত করেননি।’
জীবনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অবলোকন করতে চান কবির চান্দ। উৎসুক তিনি ভিন্ন রকম পাঠেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর, আরেকবার মাস্টার্স করেছেন অর্থনীতিতে, জাপান থেকে। কিছুদিন পড়িয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। অসম্ভব রকম বৈচিত্র্য-সন্ধানী, গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলিও তারই স্বাক্ষর। ভালবাসেন পড়াতে, তার চেয়েও বেশি, পড়তে। অপছন্দ নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক, সব ধরনের ভণ্ডামি। এক সন্তানের জনক। জন্মেছেন নরসিংদীর রায়পুরায়, ১৯৭১ সালে।