আনবাড়ি পরিচিতি – আনবাড়ি মানে আরেক বাড়ি, জেলখানা যেমন, প্রবাস যেমন। স্বদেশের গল্প আর বিদেশের গল্প এরকম ভেদাভেদ আসলে হয় না। শেষপর্যন্ত গল্প গল্পই, ব্যক্তির বা সমষ্টির, কেবল মানুষের, ফলে আমরা দুজনেই স্থির করলাম, তাবত পরবাস নিয়েই লেখা হতে পারে, মিসফিটসদের জন্যে মিস-আন্ডারস্টুডদের জন্যে লস্ট-ইন-দ্য-পোস্টদের জন্যে সব দেশই পরবাস। আবার দেশে দেশে মোর দেশ আছে এইরকম আত্তীকরণও ঘটে যায় প্রবাসজীবনে। প্রত্যেক দেশের প্রাথমিক রূপ পাশাবতীর বোনদের সেই ছড়ার মতন, জিতিলে সে মালা পায়, হারিলে সে পেটে যায়, হজম হয়ে যায় নগরসভ্যতার পেষণে, অথচ সব দেশের বুকের ভিতর গুমগুম করছে তার শীতকালীন রূপকথা, তার দিদিমার মিঠাই, সহজে সে তার বুক খুলে দেয় না। যখন দেয়, তখন কত পরবাসীর জায়গা হয়ে যায়, কত অচেনা মুখে চেনা মানুষকে আবিষ্কার করে ফ্যালে মানুষ। কত অচেনা হাত এগিয়ে দেয় সহানুভূতির রুমাল (Whoever you are, I have always depended on the kindness of strangers...)। কাঁচাবাজারে আসা ফটফটে বিদেশিনী আর গলদঘর্ম বিয়েবাড়িতে রান-থান-সেফটিপিন কোন অংশের রোস্ট পাতে পড়লো এই নিয়ে চেঁচিয়ে যাওয়া স্বদেশিনী এক হয়ে উঠতে থাকে। গজদাঁত বের করে শান্ত লাজুক হাসি দিয়ে ঝুঁকে ঝুঁকে হেঁটে চলে যেত যে নওল যুবক সন্ধ্যার রাস্তায়, কোনো আলো-জ্বলা দোকানের সবুজ প্লাস্টিকের থালায় ফুরফুরে ডিমেল কেক খাবে বলে- তারই আরেক রূপ হাজার হাজার মাইল দূরের রাস্তায় চোখে পড়ে। সকলি সমবেত হয় এক হৃদয়ের কিনারায়।
লেখক পরিচিতি লুনা রুশদী জন্ম ২৪ অক্টোবর, ১৯৭৫, করোটিয়া। শৈশব কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার্সে। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে লেখাপড়া নবম শ্রেণী পর্যন্ত, তারপর ১৯৮৯ থেকে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। মেলবোর্নে লা-ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক, পরবর্তীতে বৃত্তি নিয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এ স্নাতোকত্তর লেখাপড়া সিডনির ইউ.টি.এস বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যাংকিং সেক্টরে চাকরি নিয়ে দশ বছর নিউজিল্যান্ড থাকার পর বর্তমানে মেলবোর্ন প্রবাসী। মেলবোর্নে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে লেখালেখির শুরু - প্রথম বাংলাদেশি পত্রিকা ‘অঙ্কুর’ সম্পাদনা ছাত্রজীবনে। বাংলায় প্রথম প্রকাশিত কবিতা কলকাতার ‘দেশ’ পত্রিকায় ১৯৯৪ সালে। এরপর বিভিন্ন বাংলাদেশি ও ভারতীয় পত্রিকায় লেখালেখি। প্রথম প্রকাশিত ইংরেজি গল্প নিউজিল্যান্ডের ‘লিসেনার’ পত্রিকায় ২০১১ সালে। প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থ অরুন্ধতি রায় এর ‘দ্যা ব্রোকেন রিপাব্লিক’ (২০১৩), প্রকাশক শুদ্ধস্বর।
সাগুফতা শারমীন তানিয়া জন্ম ৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭৬, ঢাকার বাসাবোতে। শৈশব কেটেছে বাসাবোর কদমতলার অলিগলিতে খেলে বেড়িয়ে। প্রথম পাঠ মায়ের কাছে, এরপর স্কুল। স্কুল ও কলেজ যথাক্রমে হলিক্রস গার্লস স্কুল ও কলেজ। স্নাতক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদ থেকে। স্নাতকোত্তর যুক্তরাজ্যে। স্বল্পসময়ের জন্য শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়া। এরপর হাউজিং সেক্টরে চাকুরি। মূলতঃ নানার উৎসাহে লেখালেখির এবং আঁকাআঁকির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, এসবের শুরু মনে নেই। দেয়ালপত্রিকা, স্কুল সাহিত্য সাময়িকী এইসব করে ঝালাই করা কেবল। প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প- 'কবিতাযাপন', প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ- 'কনফেশন বক্সের ভিতর। অটাম-দিনের গান' (২০১০), প্রকাশক ভাষাচিত্র। দ্বিতীয় প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ- 'ভরযুবতী, বেড়াল ও বাকিরা' (২০১১), প্রকাশক শুদ্ধস্বর। তৃতীয় প্রকাশিত গ্রন্থ 'অলস দিন-খয়েরিপাতা-বাওকুড়ানি' (২০১২), প্রকাশক শুদ্ধস্বর।