“বিজ্ঞানের প্রজেক্ট" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ বিজ্ঞানচর্চার মূল লক্ষ্য হল প্রকৃতির নিয়মগুলাে উদঘাটন করা। আবিষ্কৃত এই নিয়মগুলাে যেমন গভীর উপলব্ধি দেয় বিশ্বজগতকে জানার তেমনি দেয় বর্ধিত স্বাধীনতা পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণের। এজন্য সৃজনশীলতা চাই, চাই উদ্ভাবনী ক্ষমতা, জানার স্পৃহা। রহস্যোদঘাটনের অনুসন্ধিৎসা ও প্রেরণা জন্মগত বৈশিষ্ট্য নয় কোনাে শিক্ষার্থীর। ছােট বয়স থেকে চিন্তা করার স্বাধীনতা, পরীক্ষানিরীক্ষা, যন্ত্রনির্মাণ ও পর্যবেক্ষণের একটি বিশেষ মনােভংগি একটি সংস্কৃতি। শিক্ষালাভের শুরুতেই এই উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের সংগে একটি আনন্দের আবহে ছেলেমেয়েরা যদি শিক্ষালাভের সুযােগ পায়, তাহলে বিজ্ঞানমনস্কতা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা সে অর্জন করতে পারে। যে পরীক্ষাগুলাের পদ্ধতি পাঠ্যবইয়ে দেয়া আছে এবং যেসব পরীক্ষার ফলাফল আগে থেকেই জানা, তা শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করে না। যদিও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কৌশল শিখতে এই প্রমিত পরীক্ষাগুলাে সহায়তা দেয়। এই বইয়ের প্রজেক্টগুলাে স্বভাবতই পাঠ্যবইয়ের নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার বহির্ভূত। যন্ত্রনির্মাণের পরিকল্পনা, যন্ত্র নির্মাণ এবং নিজ হাতে তৈরি যন্ত্রের সাহায্যে তথ্য উদঘাটন একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃতবিজ্ঞানীর মতােই নতুন উপলব্ধির জগতে নিয়ে যায়। আপন স্কুল প্রাংগণে : কতােটা বৃষ্টিপাত ঘটলাে বিশেষ তারিখে অথবা কোনাে নির্দিষ্ট মাস বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাপ কতাে, তা কোনাে বইতে লেখা নেই অথবা আবহাওয়াবিজ্ঞানের তথ্যকেন্দ্রের ঘােষণায় এটি পাওয়া যাবে না, যেমন পাওয়া যাবে না কোনাে বিশেষ সময় বা এলাকায় বাতাসের গতি বা আর্দ্রতা সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য। একজন শিক্ষার্থী নিজেই এজন্য যন্ত্রনির্মাণ ও তথ্যসংগ্রহ করে চমত্যার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এ ধরনের কিছু নতুন প্রজেক্ট সংযােজন করে বিজ্ঞানের মজার প্রজেক্টের দ্বিতীয় সংস্করণটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, যার প্রথম সংস্করণ অনেক আগেই নিঃশেষিত হয়েছে। বিজ্ঞান প্রজেক্ট নিয়ে লেখা আমার অন্য বই এর সংগে মিলিয়ে এবং অন্যান্য প্রজেক্ট-এর বই পড়ে শিক্ষার্থীরা নিজেই নতুন প্রজেক্ট-এর কথা ভাবতে পারবে, এটিই প্রত্যাশিত। প্রজেক্টগুলাে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাসকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে লেখা। এগুলাে হুবহু না মেনেও এর আলােকে নতুন প্রজেক্ট নির্মিত হতে পারে।
সৌমেন সাহা ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই জেলাতেই। খুলনার স্বনামধন্য সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও গণিতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানকার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লন্ডন কলেজ অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটিং বিভাগ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাসহ বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। সৌমেন সাহা নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত। খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাণিক বিজ্ঞানাগার খুলনার কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পের উদ্ভাবনের কারণে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন। পাঠক সমাদৃত সৌমেন সাহা এর বই সমূহ হলো ‘প্রাচীন ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ’, ‘বৈদিক গণিতের পরিচয়’, ‘পাগল করা গণিত’, ‘যন্ত্ররা যেভাবে কাজ করে’, ‘বিজ্ঞানের জানা অজানা কথা’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ পাঠ’, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’ ইত্যাদি। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত সৌমেন সাহা এর বই সমগ্র খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এই জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে আত্মমগ্ন এই লেখক বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।