“মাটি ও মানুষের উপাখ্যান" বইটি সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ ইমদাদুল হক মিলন তাঁর পরাধীনতা এবং নূরজাহান-এর মতো উপন্যাস লিখে বাংলা কথাসাহিত্যে নিজের অবস্থান ইতোমধ্যেই স্থায়ী করেছেন। প্রথম উপন্যাস যাবজ্জীবন থেকেই বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, বিশেষ করে, মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর অঞ্চলের মানুষের জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়-আশয় অত্যন্ত নিপুণতার সাথে তাঁর সাহিত্যে তুলে ধরেছেন। আঞ্চলিক ভাষাকে দিয়েছেন বাঙময়তা ও বিশেষ মাত্রা। বর্তমান গ্রন্থ মাটি ও মানুষের উপাখ্যান ইমদাদুল হক মিলনের বাঁকাজল, নদী উপাখ্যান, ভূমিপুত্র, ভূমিকা, এক দেশে ও টোপ - এই ছয়টি উপন্যাসের সংকলন। উপন্যাসগুলো বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনকে ঘিরে রচিত। ইমদাদুল হক মিলন এই ছয়টি উপন্যাসে গ্রামবাংলার মাটিঘেঁষা মানুষ, তাদের দৈনন্দিন জীবন-আচরণ ও বেঁচে থাকার নিরন্তর যুদ্ধের ছবি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী এবং মায়াবী ভাষায় তুলে ধরেছেন। প্রতিটি উপন্যাসের চরিত্র ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গ্রামবাংলাকে নিয়ে এমন ` বিচরণ সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে সচরাচর দৃষ্টিগোচর হয় না। তাই মাটি ও মানুষের উপাখ্যান আমাদের সাহিত্য ভাণ্ডারে একটি অনন্য সংযোজন বলে পাঠকের কাছে বিবেচিত হবে বলে আশা করা যায়।
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।