“সিকস্তি” বইটি সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ সিকস্তি মানে ভাঙ্গন, নদীর ভাঙ্গন, উপকূলের পরিবর্তন। নদীর পাড় ভাঙ্গে আবার অন্যস্থানে জেগে ওঠে। মালিকানা নিয়ে কলহ, সংঘর্ষ এখানে নিত্য-নৈমিত্তিকের ঘটনা। প্রভাবশালী চক্রের সাথে এখানে যুক্ত হয় প্রশাসনের হাত। দরিদ্র ভূমিহীন বঞ্চিত হয় অন্যভাবেও - জমি জরিপে, খাস জমি বন্দোবস্তে। ক্ষমতার বলয়ে নানা অভিসন্ধির কূটচালে বিপণ্ন হয় তাদের স্বার্থ, বিনষ্ট হয় জীবন। ‘সিকস্তি’ বৃহৎ অর্থে সমাজের চারিদিকের ভাঙ্গন। শিক্ষায় সন্ত্রাস, রাজনীতিতে অস্থিরতা, মানবিক সম্পর্কের অবনতি, ন্যায়-নীতির বিপর্যয়, সুস্থ মূল্যবোধের অবক্ষয় এই ভাঙ্গনেরই নানা মাত্রা। গ্রামীন পটভূমি এই উপন্যাসের মূল হলেও শহর এসেছে গ্রামের বিপরীতে ভিন্ন শক্তির প্রতিভূ হিসাবে। গ্রাম আর নগরের টানা পোড়েনে এগিয়েছে কাহিনী - সম্পূর্ণতা পেয়েছে চরিত্রেরা। পরিচিত অনেক সমস্যা উপস্থাপিত হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। কেবল স্থান ও কালের প্রথাসিদ্ধ রীতিকে ভেঙ্গে নয়, পাত্র-পাত্রীকে একই সঙ্গে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে উপস্থাপিত করে প্লট চক্রাকারে আবর্তিত হয়েছে। জীবন আর মৃত্যুর দেয়াল সরে সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অতিপ্রাকৃতের আবহ। আমাদের সমকালীন কথাসাহিত্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় লেখকের আরো একটি সফল সংযোজন ‘সিকস্তি’।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।