পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাচীন সাহিত্যের লিরিকধর্মী প্রেমের কবিতার একটি সংকলন বাঙালি পাঠকের সামনে উপস্থিত করা হল। এর আগে এ-ধরনের কোনো সংকলন প্রকাশিত হয়নি। প্রথমেই যে-কথা বলা প্রয়োজন তা হল, এই সংকলন পণ্ডিত বা গবেষকের জন্য নয়, রুচিমান ও মননশীল সাধারণ বাঙালি পাঠকের রসপিপাসার তৃপ্তিসাধনই এর একমাত্র উদ্দেশ্য। প্রেমের কোনো বিশেষ তত্ত্ব প্রতিপাদন বা প্রতিষ্ঠা করতে আমরা চাইনি। প্রেমের আভিধানিক অর্থ যা-ই হোক, আধুনিককালে আমরা শব্দটিকে ঘিরে একটা ব্যঞ্জনার পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে নিয়েছি। প্রেমের মূলে কাম, কিন্তু কাম যে প্রেম নয়, তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না। যে বিচিত্র রূপান্তরের মধ্য দিয়ে কামের প্রেমে পরিণতি, তা আমাদের কাছে স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু এই রূপান্তরের প্রকৃতি সম্পর্কে প্রাচীনকালের বিভিন্ন জাতির ধারণা সর্বত্র একইরকম ছিল না; আবার প্রেম যে কাম নয়- কামের ঊর্ধ্বায়ণ, সে সম্পর্কেও কোনো প্রাচীন জাতিরই ধারণার পার্থক্য ছিল না। লিরিক-সাহিত্যে বিভিন্ন-জাতির প্রেমের যে ধারণা ব্যক্ত হয়েছে, তার কিছুটা পরিচয় এই সংকলনে পাওয়া যাবে। প্রেমের প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ জীবজগতের প্রত্যেকের সঙ্গে সমান, সে সাধারণ, কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে সে উন্নীত, মহিমান্বিত, অসংখ্যের মধ্যেও বিশিষ্ট ও অসাধারণ। প্রেমই মানুষকে সর্বপ্রথম ব্যক্তিত্বের আস্বাদ দিয়েছে। সমাজে সভ্যতায় যখন ব্যক্তিবোধ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত, প্রাণধারণের প্রেরণায় মানুষ যখন কর্মে ও বিশ্বাসে যুথের সঙ্গে অভিন্ন, সেই আদিমকালেও পুরুষ কিংবা নারী সমষ্টি থেকে পৃথক হয়েছে