‘ভ্রমণ সমগ্র : ভবকুঁড়ের বাইরে-দূরে’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ বেড়াতে তিনি বিশেষ ভালোবাসেন না। কিন্তু যখন বেরিয়ে পড়তেই হয় এবং লিখতেই হয়, তখন কলম থেকে যা সৃষ্টি হয়, সে কিন্তু ভ্ৰমণ-কাহিনি থাকে না। হয়ে ওঠে অন্যরকম সব রমন্যাস। তিনি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথাতেই শোনা যাক, ‘… সবই আমার কেজো ভ্রমণের বৃত্তান্ত। বেড়াতে যাওয়ার জন্য খুব বেশি বেরোইনি। গোটা ভারত আর আমেরিকা। এই পরিভ্রমণ এখনও অব্যাহত আছে।...পত্রিকা সম্পাদকদের তাগিদেই যা কিছু ভ্রমণ বিষয়ক লেখা আমার। ...যাই হোক, সংকলিত এই বৃত্তান্তগুলিতে আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও অবলোকনের কথা রইল। রচনাগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।...পাঠকেরা কতদূর আগ্রহী হবেন, কে জানে।’ পাঠক, কী বুঝলেন? শীর্ষেন্দুর ভ্রমণ সমগ্র অন্যচোখে, অন্য হাসিকান্নায় মোড়া কাহিনিমালা। এতকাল অগ্রস্থিত ‘রামায়ণের সেই বনবাসের পথে” ভারতযাত্রার পাশাপাশি ‘প্রয়াগ কুম্ভমেলা’, ‘গঙ্গাদ্বীপে অষ্টপ্রহর কীর্তন …প্রভৃতির সবশেষে রয়েছে ‘বাঙালের আমেরিকা দর্শন’।
সূচিপত্রঃ * রামায়ণের সেই বনবাসের পথে ১১ * প্রয়াগ মহাকুম্ভ ৫৩ * গঙ্গাদ্বীপে অষ্টপ্রহর কীর্তন ৬৫ * সাধুদের খাওয়া দেখে তাক লাগে ৬৯ * সাধুর কাতার গৃহী কম ৭৩ * বাঙালের আমেরিকা দর্শন ৭৭
পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের টালমাটাল সময়ে পরিবারসমেত কলকাতা পাড়ি জমান। বাবার চাকরির সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শৈশব কেটেছে তার। কোচবিহার বোর্ডিং স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন তিনি। মাধ্যমিক পাস করেন কোচবিহার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। পরে কলকাতা কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। শীর্ষেন্দু তার পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মাধ্যমে। দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন কিছুদিন। বর্তমানে সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এর সহকারী সম্পাদক পদে নিয়োজিত আছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই ভীষণ বইপড়ুয়া ছিলেন। হাতের কাছে যা পেতেন তা-ই পড়তেন। খুব ছোটবেলাতেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মানিক বন্দোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দোপাধ্যায় এর মতো লেখকদের রচনাবলী পড়ে শেষ করেছেন। এই পড়ার অভ্যাসই তার লেখক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। ১৯৫৯ সালে দেশ পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ‘জলতরঙ্গ’ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশ পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’। এরপর থেকেই নিয়মিত লিখতে থাকেন তিনি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই এর সংখ্যা দু’শতাধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস পার্থিব, দূরবীন, মানবজমিন, গয়নার বাক্স, যাও পাখি, পারাপার ইত্যাদি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর রহস্য সমগ্র রহস্যপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রায় ৪০ এর অধিক রহস্য গল্প প্রকাশিত হয়েছে ‘অদ্ভুতুরে সিরিজ’ নামকরণে। মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি, ভুতুড়ে ঘড়ি, হেতমগড়ের গুপ্তধন, নন্দীবাড়ির শাঁখ, ছায়াময় ইত্যাদি এই সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু ছোটগল্প রচনা করেছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই সমূহ দুই বাংলায় পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে সমানতালে। এছাড়াও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই সমগ্র অবলম্বনে বিভিন্ন সময় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তার উপন্যাস ‘যাও পাখি’ এবং ‘মানবজমিন’ নিয়ে বাংলাদেশেও ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হয়েছে। তার সৃষ্ট চরিত্র শাবর দাশগুপ্ত এবং ধ্রুব পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা উপন্যাস ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’র জন্য ১৯৮৫ সালে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ পান। ১৯৭৩ এবং ১৯৯০ সালে পেয়েছেন ‘আনন্দ পুরস্কার'। ১৯৮৮ সালে ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্য অর্জন করেন ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’। এছাড়াও, ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ লাভ করেন তিনি।