ভূমিকা যে যাই ধারণা পোষণ করে থাকুন-না কেন-একথাটি আজ আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে উজ্জ্বল উপরিকাঠামোর অভ্যন্তরে বাংলাদেশ আজ এক নির্মম অধঃগমনের ঘুণপোকার দৌরাত্ন্র্যে আক্রান্ত। দৈনন্দিনতার প্রতিমূহূর্তে আমরা ক্রমাগত হারিয়ে ফেলছি আমাদের মৌলিক অনুভূতি, সমস্ত মূল্যবোধ এবং মাহাত্ন্য। চারিদিকে এত অসংখ্য অগণিত মানুষের মাঝে আজ সম্পন্ন মানুষের স্বপ্ন দেখাও কেমন কল্পনাতীত মনে হয়।অথচ এই ভয়াবহ শূন্যতা একটি জাতির জন্য অনন্ত সত্য হয়ে থাকতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে প্রতিটি মানুষেল মনে পুনরায় বিবেককে জাগিয়ে তোলা, প্রতিটি মনে একটি অব্যর্থ স্ফুলিঙ্গ তৈরি করা যাতে আমরা পুনর্বার আমাদের নিজস্ব প্রকৃতিকে চিনতে পারি। মুক্ত হতে পারি এই ভয়াবহ দৈত্যের হাত থেকে। আমাদের ব্যক্তিমানুষেল মধ্যে মানবিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষের বীজ রোপণ করা।মহৎ জীবন গ্রন্থটি ডা. লুৎফর রহমানের শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় গ্রন্থগুলোর একটি। বাংলাভাষায় এমন সরল ও অলংকারবিহীন গদ্যে, এমন স্বতঃস্ফূর্ত কথোপকথনের ঢঙে।মানবকল্যাণমুখী দার্শিনিক চিন্তাভাবনা-সম্বলিত গ্রন্থ বিরল। তিনি যা লিখেছেন, সেগুলো সত্য বলে আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গেই লিখেছেন, যার ফলে তাঁর উক্তির মধ্যে নির্ভীক দৃঢতা আমরা সহজেই লক্ষ করি।
মোহাম্মদ লুৎফর রহমান তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমার (বর্তমান মাগুরা জেলা) পরনান্দুয়ালী গ্রামে ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা শামসুন নাহার এবং পিতা সরদার মইনউদ্দিন আহমদ, যিনি একজন স্টেশন মাস্টার ছিলেন। এই দম্পতীর চার পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে মোহাম্মদ লুৎফর রহমান একজন। তার পৈত্রিক নিবাস ছিল তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমার হাজীপুর গ্রামে। লুত্ফর রহমানের পিতা ছিলেন এফ.এ পাস। ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তার পিতার অনুরাগ ছিল। সম্ভবত একারণেই পিতার অনুরাগ লুৎফর রহমানের মাঝে প্রতিভাস হয়েছিল। নারী সমাজের উন্নতির জন্য নারীতীর্থ নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান গঠন এবং নারীশক্তি নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি এবং একজন চিন্তাশীল ও যুক্তিবাদী প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। তার প্রবন্ধ সহজবোধ্য এবং ভাবগম্ভীর। মহান জীবনের লক্ষ্য সাহিত্যের মাধ্যমে মহান চিন্তাচেতনার প্রতি আকৃষ্ট হতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। গভীর জীবনবোধ, মানবিক মূল্যবোধ, উচ্চ জীবন, সত্য জীবন, মানব জীবন, সূহ্ম বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি তার রচনার প্রসাদগুণ। প্রবন্ধ ছাড়াও তিনি কবিতা, উপন্যাস ও শিশুতোষ সাহিত্য রচনা করেছেন। এফ.এ অধ্যয়নকালীন সময়ে লুৎফর রহমান তার নিজ গ্রাম হাজীপুরের 'আয়েশা খাতুন' নামে এক মহিলা সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আয়শা খাতুনের পিতা মোহাম্মদ বদরউদ্দীন এ সময়ে মুন্সীগঞ্জ রেলওয়ের বুকিং ক্লার্ক ছিলেন। লুৎফর রহমানের সাহিত্য সাধনা শুরু হয়েছিল মূলত কবিতা রচনার মাধ্যমে। ১৯১৫ সালে চল্লিশটি কবিতা নিয়ে তার প্রথম এবং একমাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ প্রকাশিত হয়। পরে তিনি বিভিন্ন প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প, কথিকা, শিশুতোষ সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেছেন। তার কিছু অনুবাদ কর্মও পাওয়া যায়। চরম দারিদ্রের মুখোমুখি যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মানবতাবাদী সাহিত্যিক ডাক্তার লুৎফর রহমান ১৯৩৬ সালের ৩১ মার্চ ৪৭ বৎসর বয়সে বিনা চিকিৎসায় নিজ গ্রাম মাগুরার হাজিপুর গ্রামে মৃত্যুবরন করেন