#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা বই- দশটি গল্প বাই ডয়েল। লেখক- স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। ভাষান্তর- শিশির চক্রবর্তী। পৃষ্ঠাসংখ্যা- ২০৮ ধরন- রহস্য, ছোটগল্প। প্রকাশনী- পত্রভারতী। স্যার আর্থার কোনান ডয়েল মূলত তার অমর সৃষ্টি শার্লক হোমসের জন্যই বিখ্যাত। তবে যে কথা অনেকেই জানেন না ত হচ্ছে স্যার কোনান ডয়েল কিন্তু শার্লক হোমসকে তার শ্রেষ্ঠ লেখা বলে মানতেন না। তার সবচেয়ে প্রীয় লেখা ও গল্পগুলো ছিলো ঐতিহাসিক গল্প ও শার্লকহীন। কিন্তু শার্লক হোমসের তুমুল জনপ্রীয়তার কারনে তার অনেক লেখাই আড়ালে চলে যায়। তারমধ্যে অনেক ছোটগল্পও রয়েছে। তেমন দশটি গল্পের সংকলন নিয়ে সৃষ্টি এই বইটি। এই দশটি গল্পগুলো হচ্ছে, বন্ধ ঘরের রহস্য, কালো প্রাসাদের মালিক, নিরুদ্দেশ ট্রেন, ক্যাভিয়ারের জার, সেই হাতটা, প্রতিশোধ, মুষ্টিযুদ্ধ, দেবতার আংটি, অন্তর্ধান ও ঘটনাটি। এরমধ্যে কিছু আছে থ্রিলার, কয়েকটি হরর, প্রতিশোধমূলক ও রহস্য-অপরাধ বিজ্ঞানের সংমিশ্রন।
“বন্ধ ঘরের রহস্য” একটি প্রাসাদের বন্ধ একটি কামরাকে কেন্দ্র করে। প্রাসাদের প্রাক্তন মালিক একুশ পূর্ণ না হওয়াতক তার ছেলেকে ওই কামরা খুলতে নিষেধ করে। একুশ পূর্ণ হলে সে ওই কামরা খুলে এবং অজ্ঞান হয়ে যায়। কি দেখে সে অজ্ঞান হয়ে যায়? “কালো প্রাসাদের মালিক” এক বিদ্রোহী ফরাসির গল্প যিনি দিত্বীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক জার্মান অফিসারকে জ্যান্ত ধরে ফেলেন। এরপর বেচারার এমন দশা শুরু করলেন যেমনটি জার্মান অফিসাররা তার ছেলের সাথে করেছিলো। কি করেছিলো জার্মান অফিসাররা সেই ডিউকের ছেলের সাথে যা তিনি এখন এই অফিসারের সাথে করতে চান? “নিরুদ্দেশ ট্রেন” একটি অসাধারন অপরাধ পরিকল্পনার গল্প যেখানে অপরাধী একটি ট্রেনকেই গায়েব করে ফেলে। সেইসাথে ট্রেনের যাত্রীদেরও। কারন কিছু বিশিষ্ট লোকের দুর্নিতী যাতে প্রকাশ না পায়। কিন্তু কথা হচ্ছে কিভাবে সে সর্বকালের অন্যতম সেরা একটি অপরাধ ঘটিয়ে দিলো কোনো প্রমান ছাড়াই এবং কেনোই বা সে পরবর্তীতে তা নিজে থেকেই প্রকাশ করলো?
“ক্যাভিয়ারের জার” হচ্ছে চীনে বর্বর উপজাতিদের ঘেরায় আটকে পড়া একদল বিদেশীর গল্প যারা কোনরকম হামলা ছাড়াই গনমৃত্যুর শিকার হয়। কথা হচ্ছে হামলা না করা হলে তারা মারা গেলো কিভাবে? শুধু একজনই বা কিভাবে বেচে গেলো? “সেই হাতটা” একজন বৃটিশ ডাক্তারের গল্প যিনি একবার এক আফগানীর একটি গ্যাংগ্রীন হওয়া কাটা হাত সংরক্ষন করেছিলেন। কিন্তু এরপর মৃত হাতের মালিক তার কাছে সেই হাত ফেরত চাইছে। কিভাবে একজন মৃত ব্যাক্তি ফিরে এসে তার কাটা হাতের দাবী করছে? এর পরিত্রান কি? “প্রতিশোধ” গল্পটি দুজন পুরাতত্ববিদ বন্ধুর গল্প যার একজন এক রহস্যময় কারনে ভয়ংকর প্রতিশোধের ছক কষে। কি সেই কারন আর কি সেই প্রতিশোধ আর কি হয় তার পরিণতি?
“মুষ্টিযুদ্ধ” এক ভৌতিক বক্সারের গল্প যাকে আজ পর্যন্ত কেউ বক্সিংয়ে হারাতে পারেনি কিন্তু সেই বক্সারই এক ভৌতিক কুকুরের ভয়ে ভীত হয়ে থাকে। কে সেই বক্সার? কেনোই বা সে রাতের বেলা পথচারীদের ধরে নিয়ে জোর করে বক্সিংয়ে বাধ্য করে? ওই কুকুরটির সাথে তার সর্ম্পক কি? “দেবতার আংটি” এক প্রাচীন মিশরীয় ব্যাক্তির অমরত্ব ও প্রেমের কাহিনী। অমরত্ব যারজন্য আর্শিবাদের বদলে অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। কিভাবে সে অমরত্ব লাভ করেছিলো? কেনোই বা এই অমরত্ব তারজন্য যন্ত্রণাকর হয়ে দাড়ালো? “অন্তর্ধান” এক হারিয়ে যাওয়া ডাক্তার ও তার খুনের দায়ে ফেসে যাওয়া এক ব্যাক্তির গল্প যেখানে মূল কালপ্রিট থাকে এক রহস্যময় ব্যাক্তি। কিন্তু খুনের কারনটা কি? সেটা কি প্র্রেম না টাকা পয়সা? আর কেই বা খুনী? এবং সর্বশেষ গল্প “ঘটনাটি” প্ল্যানচেটের মাধ্যমে বলা এক আত্মার গল্প। আত্মা তার মিডিয়ামকে জানাচ্ছে কিভাবে সে মারা গিয়েছিলো।
প্রতিটি গল্পই সুন্দর। গল্পের ধরন বিভিন্ন ধরনের হওয়াতে পাঠকের বিরক্তি লাগবেনা। একেকবার একেকরকম স্বাদের কারনে তার আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। বেশীরভাগ পাঠকের অবশ্য অ-শার্লকীয় কোনান ডয়েলের সাথে পরিচয় নেই। এই বইটির মাধ্যমে অ-শার্লকীয় রচনা সর্ম্পকে ভালো পরিচয় হবে। ছোটগল্পের আলাদা একটা মজা আছে। শর্টকাট হওয়াতে দ্রুত টুইষ্ট পাওয়া যায়। শার্লকভক্ত তো বটেই, যারা রহস্য, রোমাঞ্চ, হরর ও ছোটগল্প পছন্দ করেন তাদের সবার ভালো লাগবে বইটি। অনুবাদ সর্ম্পকে কিছু বলা দরকার। সাধারনত ওপার বাংলার অনুবাদ বরাবরই একটু পুরোনো ধাচের হয়। কল্পনা করুন শার্লক হোমস জিজ্ঞেস করছেন, মশাই কেমন আছেন? শুনতে কেমন খাপছাড়া শোনায়। তবে শিশির চক্রবর্তী সুন্দর অনুবাদ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের সেই মধ্যযুগীয় বাংলা বলে মনে হয়না। এছাড়া উপস্থানও রেখেছেন অত্যন্ত সুন্দর, সহযবোধ্য ও সাবলীল। এজন্য পড়তে খারাপ লাগেনি। আশা করি বাকিদেরও ভালো লাগবে। ধন্যবাদ রিভিউ পড়ার জন্য। রেটিং-৫.০০/৫.০০