ভূমিকা প্রথমত, বইটা পুরুষ ও নারীর দৈহিক সম্পর্কের আলোচনা নয়। উহা জৈব ব্যাপার। ইহাতে বাঙালী-অবাঙালীর প্রভেদ দূরে থাকুক, মূলত মানুষে এবং পশুতেও কোনও তারতম্য নাই। সুতরাং এই জিনিসটাই যদি প্রসঙ্গ হয় তাহা হইলে উহাকে বাংলা দেশ ও বাঙালী সমাজের মধ্যে আবদ্ধ করিবার . কোনও অর্থ হয় না। এই দেহধর্মের যতটুকু নৈসর্গিক তাহার সম্বন্ধে কেবলমাত্র জ্ঞানমার্গে থাকিতে হইলে জীবতত্ত্ব ও দেহতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক বই পড়াই যথেষ্ট। অবশ্য ইহা সত্য যে, মানুষ এই জৈব ব্যাপারের কর্মকাণ্ডকে পুরাপুরি জৈব রাখে নাই, উহার উপর এক ধরনের ‘মনুষ্যত্ব' বা ইনসানিয়ৎ’ চাপাইয়াছে। কিন্তু এই জৈববৃত্তির নিসর্গোত্তর পরিতৃপ্তির জন্য পুরাতন কামসূত্র বা নূতন 'যৌনবিজ্ঞান' পড়িলেই চলে। আমি বেনামীতে এই পুরাতন শাস্ত্র বা নুতন বিজ্ঞান লিখিতে বসি নাই। ইহার পর আর একটা কথাও বলা আবশ্যক। আমি বাঙালী নরনারীর সামাজিক এবং পারিবারিক সম্পর্কের আলোচনাও করিব না। উহা সমাজতত্ত্বের বিষয়। আমার কারবার একান্তই ব্যক্তিগত মানসিক জীবন লইয়া। সুতরাং ব্যক্তি হিসাবে নরনারীর মধ্যে যে নিবিড় ও বিশিষ্ট মানসিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় তাহার পরিধিই আমার আলোচনারও গণ্ডী। তবে এই সম্পর্কও বিশ্বজনীন এবং সর্বকালীন। সুতরাং আমার বিষয়বস্তুকে দেশে ও কালে আরও নির্দিষ্ট করিতে হইবে। সোজা কথায় বাঙালী জীবনের একটা বিশেষ যুগে পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক যে বিশিষ্ট রূপ ধরিয়াছিল তাহার একটা বিবরণ দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য।
Nirodchandra Chowdhury (জন্ম: ২৩ নভেম্বর, ১৮৯৭ - মৃত্যু: ১ আগস্ট, ১৯৯৯) একজন খ্যাতনামা দীর্ঘজীবী বাঙালি মননশীল লেখক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ। স্কলার এক্সট্রাঅর্ডিনারী শীর্ষক ম্যাক্স মুলারের জীবনী লিখে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে নীরদচন্দ্র চৌধুরী ভারত সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা হিসেবে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তাঁর ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও তীর্যক প্রকাশভঙ্গীর জন্য বিশেষভাবে আলোচিত ছিলেন।