"বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র" বইটির 'মুখবন্ধ' থেকে নেয়াঃ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগের অধিকাংশ কবিই সংগীতশাস্ত্রে বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন, এমনকি সংগীত পরিবেশনার অপরিহার্য উপকরণ বাদ্যযন্ত্রের প্রকরণ, তার উৎপত্তি ও ব্যবহার বিধির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণেও তাঁরা তৎপর ছিলেন। তারই একটি ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় মহাকবি আলাওল রচিত 'বাদ্যযন্ত্রের উৎপত্তি-কথা' শীর্ষক কাব্যাংশে। বাংলা ভাষা-সাহিত্যের প্রাচীন থেকে শুরু করে মধ্যযুগের কবিদের আন্তরিক তৎপরতার ভেতর দিয়ে ঐতিহ্যগতভাবে সংগীত-বাদ্যযন্ত্রের পরিচিতি, সংজ্ঞায়ন, ব্যবহার বিধির যে ধারা অদ্যাবধি এদেশের সাধক-কবিদের গানের সুর-বাণীতে প্রবাহমান, তা নতুন দৃষ্টিতে সুধী সমাজের সামনে উপস্থাপন করার লক্ষ্যেই বর্তমান গ্রন্থ রচনার যৌথ চেষ্টা। এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস, দ্বিতীয় অধ্যায়ে সাধক-কবিদের সাধনা ও সৃজনশীলতায় বাদ্যযন্ত্র, তৃতীয় অধ্যায়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের শ্রেণীবিন্যাস ও তালিকা, চতুর্থ অধ্যায়ে এদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সচিত্র পরিচিতি এবং পঞ্চম অধ্যায়ে বাংলাদেশের অন্যান্য জাতিসত্তা তথা বাঙালি ভিন্ন এদেশে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্তা তথা নৃগোষ্ঠীর ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের তালিকা, পরিচিতি, ব্যবহার বিধি ও চিত্র সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের আলোচনায় প্রাচীন, মধ্যযুগ; এমনকি সাম্প্রতিক কালের লোকায়ত সাধকদের জীবন-সাধনা ও সৃষ্টিকর্মকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই সত্য অনুভূত হয় যে, প্রথম থেকেই এদেশের মানুষ বাদ্যযন্ত্রকে শুধু সংগীত পরিবেশনার অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করেননি, বরং তাকে সাধনার উপকরণ হিসেবেও গ্রহণ করেছেন।
নাজমীন মর্তুজা, ঐতিহ্য সচেতন কবি, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক। কবিতা রচনার স্বকীয়তায় তিনি যেমন মৌলিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, তেমনি কথাসাহিত্য ও গবেষণাকর্মে অনন্য অভিজ্ঞতার প্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, কাব্যগ্রন্থ : গুরুপরম্পরা, শ্রীরাধার উক্তি, মহামায়া কঙ্কাবতী, বাস্তবের লুকোচুরি; উপন্যাস : নোনাজলের চোরাবালি; গবেষণাগ্রন্থ : ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্য : জারিগানের আসরে 'বিষাদ-সিন্ধু' আত্তীকরণ ও পরিবেশন-পদ্ধতি, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, বাংলাদেশের ফোকলোর, সাইদুর রহমান বয়াতি : সাধকের স্বদেশ ও সমগ্র, বাংলা পুথি সাহিত্য। তিনি গবেষণাকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জন করেছেন সিটি-আনন্দ আলো পুরস্কার ২০১২। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন আন্তর্জাতিক বঙ্গবিদ্যা সম্মেলন এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লোকউৎসবে। তিনি ভাবনগর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ভাবনগর আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকার সহকারী সম্পাদক। বর্তমানে স্বামী-সন্তানসহ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। জন্ম : ১৫ মার্চ ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ।