ভূমিকা গীতা হিন্দর সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ। স্বয়ং ভগবান, শ্রীকৃষ্ণের মুখ-নিঃসৃত বাণী। কিন্তু তাছাড়া, গীতার আর একটা বিশেষ সার্থকতা আছে। আমাদের এই ভারতবর্ষে কোনদিন চিন্তার স্বাধীনতায় কেউ বাধা দেয় নি। যে-কোন সাধক তাঁর জ্ঞান-বিশ্বাস মত যে-কোন মতকে সত্য বলে জেনেছেন, তাকেই প্রকাশ করবার স্বচ্ছন্দ অধিকার তিনি পেয়েছেন। তাই আমাদের ধর্ম্মে আমরা দেখতে পাই, নানান শাস্ত্র, নানান ধৰ্ম্মমত, নানান ধৰ্ম্ম পথ। তাই আমাদের ধর্ম্মে আমরা দেখতে পাই প্রতিমাপ,জা থেকে আরম্ভ করে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা পর্যন্ত, যাগ-যজ্ঞ থেকে আরম্ভ করে তান্ত্রিক আচার পর্যন্ত। যখন এই সব বিভিন্ন ধর্মমত জন- সাধারণের মধ্যে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়লো, তখন স্বভাবতঃই সাধারণ লোক বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো। এই সব পরস্পর-বিরোধী বিভিন্ন মত ও পথের মধ্যে কোনটি সত্য পথ? একটা ভয়াবহ ধৰ্ম্ম-সঙ্কট দেখা দিল। ভারতবর্ষের সভ্যতার আদি যুগে যখন এই রকম ধর্ম - সঙ্কট উপস্থিত হয়েছিল সেই সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, কুর ক্ষেত্রের যুদ্ধ উপলক্ষে, ভারতের এই সব বিভিন্ন ধর্ম্ম ও ধর্ম মতের ভেতর থেকে ভারত-ধর্ম্মের আসল রূপটিকে গীতায় ব্যক্ত করে তুললেন। তাই গীতার মধ্যে আমরা ভারতের ধর্ম্ম-সাধনার সমস্ত বিভিন্ন অঙ্গের পরিচয় পাই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জনের মনের ভ্রান্তি দূর করবার জন্যে একে-একে জ্ঞান-যোগ থেকে আরম্ভ করে মোক্ষ-যোগ পর্যন্ত সমস্ত বিভিন্ন পথের পরিচয় দিয়ে, সৰ্ব্বশেষে বললেন, হিন্দুধর্মের যেটা হলো মৰ্ম্ম কথা, “সৰ্ব্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।” এইটেই হলো গীতার সার কথা। অনেকের ধারণা, গীতা বুঝি দৰ্ব্বোধ্য দর্শনের বই। কিন্তু আসলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সংসারের অতি সাধারণ লোকের জন্যই এই গীতা প্রচার করেন । ধর্ম্মের জটিলতার ভেতর না গিয়ে, অতি সাধারণ লোক কি করে ধর্ম্মের চরম অবস্থা লাভ করতে পারে, সেই কথাই গীতাতে বলা হয়েছে। আমাদের এই সংস্করণে গীতার সেই মূল উদ্দেশ্যকেই অনুসরণ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ পাঠকও গীতার অন্তরের সঙ্গে সহজভাবে পরিচিত হতে পারেন। ভগবানের করুণায়, আমাদের সে-উদ্দেশ্য সার্থক হয়েছে, আমাদের গীতার বহল প্রচারই তার প্রমাণ