বিশ্বপ্রপঞ্চের পিছনে এক সর্বনিয়ন্তা, সর্বশক্তিমান সত্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের মনে কখন প্রথম চেতনা জেগেছে আমরা কেউই তা জানি না। তবে যখনই জেগে থাকুক, সেই আদিম চেতনাই যে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরভাবনার জন্মদান করেছে সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । আদিম মানুষ অরণ্যে বা পর্বতগুহায় অথবা নদী বা সমুদ্রতীরে উন্মুক্ত আকাশের নীচে বাস করত। হিংস্র জন্তুর সঙ্গে যুদ্ধ করে তারা অস্তিত্ব রক্ষা করত। কখনো সেই যুদ্ধে তারা প্রাণ হারাত। কখনো তারা অপর কোনো জনগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হত, কখনো আবার অপর কোনো গোষ্ঠীকে আক্রমণ করত। অরণ্যের ফল, অরণ্যের পশু-পাখির মাংস, নদী ও সমুদ্রের মাছ এবং নদীর জল তাদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা মেটাত। এইভাবে তাদের জীবন চলত। এর মধ্যে হঠাৎ তারা একদিন দেখল তাদের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়ল, কেউ চিরনিদ্রায় ঢলে পড়ল। কখনো তারা দেখল প্রচণ্ড ঝড় এসে প্রকৃতিকে লণ্ডভণ্ড করে দিল। কখনো আবার প্রবল বর্ষণে সব ভেসে গেল। কখনো-বা আকাশের বুক চিরে বিদ্যুতের ঝলসানি অথবা বজ্রের গর্জন তাদের শঙ্কিত করে তুলল। কখনো-বা কলেরা, বসন্ত প্রভৃতি মহামারীর আকার ধারণ করে গোষ্ঠীর বহু মানুষের জীবনান্ত ঘটাল। কখনো-বা রাত্রিতে ঘুমোতে ঘুমোতে সুখস্বপ্ন বা দুঃস্বপ্নের মাধ্যমে আনন্দ অথবা আতঙ্কের অনুভূতি লাভ করল। তারা অবাক হয়ে ভাবতে বসল—নারীর বুকে কেন স্তন্যক্ষীরধারা প্রবাহিত, নারীর মধ্য হতেই কেন বের হয়ে আসে এক নতুন জীবন—এক নতুন মানুষ! আকাশের নীলিমা, সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গভঙ্গ, অমাবস্যার অন্ধকার, পূর্ণিমার সর্বপ্লাবী জ্যোৎস্না, গ্রীষ্মের প্রখরতা, শীতের তীব্রতা, তাদের মনে জাগাত বিস্ময়, আনন্দ ও শঙ্কা । অনুভূতি থেকেই তারা এক সর্বনিয়ন্তা সর্বশক্তিমান সত্তার মধ্যে আশ্রয় খুঁজতে শুরু করল। তখন থেকেই মানুষের ঈশ্বরভাবনার উন্মেষ। আজ একবিংশ শতাব্দীর শৈশবে দাঁড়িয়ে এই সমস্ত ঘটনা আদিম পুরুষ ও নারীদের জীবনে কোন বিস্ময়, কোন আতঙ্ক, কোন আনন্দের অনুভূতি আনত তা আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। কিন্তু ধর্মবেত্তা, ঐতিহাসিক, সমাজদার্শনিক, নৃবিজ্ঞানী, মনস্তত্ত্ববিদগণ একটি -সাধারণ সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, ঐ ধরনের অনুভূতিই আদিম মানুষের মনে ঈশ্বরভাবনার জন্ম দিয়েছিল। পৃথিবীর প্রাচীনতম সাহিত্য ‘ঋগ্বেদ'-এর মধ্যে আমরা ক্রমপরিণত সেই ঈশ্বরভাবনার সুপ্রাচীন রূপটির পরিচয়লাভ করি। বৈদিক যুগের ব্যাপ্তি একশ-দু'শ বছর নয়, অন্তত এক হাজার বছর। এই এক হাজার বছরে ভারতবর্ষের মানুষের পূর্বপুরুষগণের ঈশ্বরভাবনার বিবর্তনের ধারাটিও স্পষ্ট। সেই ধারা আরো পরিণতির দিকে কিভাবে গেছে তার পরিচয় রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত, তন্ত্র ও প্রাচীন পুরাণগুলিতে এবং প্রাচীন কাব্য, ব্যাকরণ, নাটক ও স্মৃতিগ্রন্থগুলিতে। অপরদিকে বৈদিক সভ্যতার পাশাপাশি সিন্ধুসভ্যতার বিকাশের যে-প্রমাণ আমরা পেয়েছি সেখানেও প্রাচীন মানুষের ঈশ্বরভাবনার রূপরেখা বিদ্যমান। উভয় সভ্যতার মধ্যে কোনটি প্রাচীনতর, কোনটি কতখানি মূলগতভাবে ভারতীয় অথবা অভারতীয়, তা নিয়ে সর্বসম্মত কোনো সিদ্ধান্তে আসা এখনো সম্ভব হয়নি। আবার উভয় সভ্যতার মধ্যে সঙ্ঘর্ষ ও সমন্বয়ের তত্ত্ব নিয়েও বাদ-প্রতিবাদ এখনো থামেনি।
দেব সাহিত্য কুটীর বাংলা সাহিত্যে অন্যতম প্রথম ও প্রধান প্রকাশনা সংস্থা৷ এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা কাল ১৮৬০৷ দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত অভিধান এবং ধর্মগ্রন্থ প্রথম থেকেই সবজ্যিনপ্রিয়৷ এছাড়া শিশু ও কিশোর পাঠ্য নানা ধরনের বই, ইংরেজি ক্লাসিক্সের অনুবাদ এবং শারদীয়া বার্ষিকী প্রকাশে দেব সাহিত্য কুটীর অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ৷ অধুনা রড়দের এবং ছোটদের জন্য নানা ধরনের গল্প সংকলন, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি এবং কমিকসও প্রকাশ করে চলেছে এই সংস্থা৷ এই সঙ্গে রয়েছে ছোটদের জন্য অসাধারণ একটি মাসিক পত্রিকা শুকতারা যা ৭০ রৎসরেও সগৌরবে এগিয়ে চলেছে৷ আর ৫৮ বছর ধরে রড়দের মনোরঞ্জন করে চলেছে মাসিক নবকল্লোল পত্রিকা৷ ণ্ডণে মানে বাংলা প্রকাশনা শিল্পে দেব সাহিত্য কুটীরইঁ এখনও এক এবং অদ্বিভীয়৷