দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কালীবাড়ি ও উদ্যান
আজ রবিবার। ভক্তেরা দলে দলে শ্রীশ্রীপরমহংসদেবকে দর্শন করতে দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়িতে আসছেন । সকলেরই অবারিত দ্বার। যিনি আসছেন ঠাকুর তাঁরই সঙ্গে কথা বলছেন । সাধু, পরমহংস, হিন্দু, খৃষ্টান, ব্রহ্মজ্ঞানী ; শাক্ত, বৈষ্ণব ; পুরুষ, স্ত্রীলোক ; সকলেই আসছেন। ধন্য রাণী রাসমণি ! তোমারই সুকৃতিবলে এই সুন্দর দেবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আবার এই সচল প্রতিমা—এই মহাপুরুষকে লোকে এসে দর্শন ও পূজা করতে পাচ্ছে।
চাঁদনি ও দ্বাদশ শিবমন্দির কালীবাড়িটি কলকাতা থেকে আড়াই ক্রোশ উত্তরে। ঠিক গঙ্গার উপরে । নৌকো থেকে নেমে সুবিস্তীর্ণ সিঁড়ি দিয়ে পূর্বাস্য হয়ে উঠে কালীবাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। এই ঘাটে শ্রীরামকৃষ্ণ স্নান করতেন । সিঁড়ির পরেই চাঁদনি। সেখানে ঠাকুরবাড়ির চৌকিদারেরা থাকে । তাদের খাটিয়া, আমকাঠের সিন্দুক, দু-একটা লোটা, সেই চাঁদনিতে এখানে-ওখানে পড়ে আছে । পাড়ার বাবুরা যখন গঙ্গাস্নান করতে আসেন, কেউ কেউ সেই চাঁদনিতে বসে খোসগল্প করতে করতে তেল মাখেন । যে সকল সাধু ফকির, বৈষ্ণব বৈষ্ণবী অতিথিশালার প্রসাদ পাবেন বলে আসেন, তাঁরাও কেউ কেউ ভোগের ঘণ্টা পর্যন্ত এই চাঁদনিতে অপেক্ষা করেন । কখনও কখনও দেখা যায়, গৈরিকবস্ত্রধারিণী ভৈরবী ত্রিশূলহস্তে এখানে বসে আছেন। তিনিও সময় হলে অতিথিশালায় যাবেন । চাঁদনিটি দ্বাদশ শিবমন্দিরের ঠিক মধ্যবর্তী । ছয়টি মন্দির চাঁদনির ঠিক উত্তরে আর ছয়টি চাঁদনির ঠিক দক্ষিণে । নৌকাযাত্রীরা এই দ্বাদশ মন্দির দূর থেকে দেখে বলে : ‘ঐ রাসমণির ঠাকুরবাড়ি !
পাকা উঠান ও বিষ্ণুঘর চাঁদনি ও দ্বাদশ মন্দিরের পুবে ইটে-তৈরি পাকা উঠান । উঠানের মাঝখানে সারি সারি দুটি মন্দির । উত্তর দিকে রাধাকান্তের মন্দির । তার ঠিক দক্ষিণে মা-কালীর মন্দির । রাধাকান্তের মন্দিরে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ, পশ্চিমাস্য। সিঁড়ি দিয়ে মন্দিরে উঠতে হয় । মন্দিরতল মর্মর প্রস্তরে আবৃত । মন্দিরের সামনের দালানে ঝাড় টাঙানো আছে—এখন ব্যবহার নেই, তাই লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা । অপরাহ্ণে পশ্চিমের রৌদ্রে পাছে ঠাকুরের কষ্ট হয়, তাই ক্যামবিসের পর্দার বন্দোবস্ত আছে । দালানের দক্ষিণ-পুব কোণে একটি গঙ্গাজলের জালা । মন্দিরের চৌকাঠের নিকট একটি পাত্রে শ্রীচরণামৃত । মন্দির মধ্যে সিংহাসনাসীন শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ ।