ভূমিকা মানব সমাজ আজ যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে সেখানে পৌঁছাতে প্রারম্ভিক সময় থেকে আজ পর্যন্ত বড় বড় সংঘর্ষের ভিতর দিয়ে তাকে আসতে হয়েছে। আমার লেখা ‘মানব সমাজ’ গ্রন্থে মানব-সমাজ প্রগতি সংক্রান্ত বিশ্লেষণাত্নক সিদ্ধান্ত লিপিবদ্দ করেছি। বিষয়টি সহজভাবেও লেখা যায় যাতে প্রগতির ধারা অনায়াসেই বুঝে নেওয়া সম্ভব। সেই কারনেই ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’ রচনায় প্রবৃ্ত্ত হয়েছি । ভারতীয় পাঠকদের সুবিধান জন্য আলোচ্য গ্রন্থে ইন্দো-ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠিকে বেছে নিয়েছি। মিশরীয় ,সিরিয়ানী বা সিন্ধুজাতি বিকাশ লেখক-পাঠক উভয়েরই বিস্তর ঝামেলা। প্রত্যেক যুগের একটি করে প্রামাণিক দলিল বিচণে প্রয়াসী হয়েছি। তবে প্রাথমিক প্রচেষ্টায় ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। যদি আমার প্রয়াস আগামী দিনের লেখকের ত্রুটিহীন রচনার সহায়ক হয়ে তবে নিজেকে সার্থক মনে করব। রাহুল সাংকৃত্যায়ন সেন্ট্রাল জেল,হাজীরাবাগ
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।