হাজার জাতের অজস্র পাখী আর ফুল-ফলে ভরা সুন্দর দেশটিকে বুক দিয়ে ঘিরে রেখেছিল একদিকে পৃথিবীর সকলের চেয়ে উঁচু আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ের সারি। অন্যধারে উত্তাল সমুদ্র ঘননীল সীমারেখা টেনে দেশটিকে আগলে রেখেছিল। সে দেশের মাটিতে সোনা ফলে। এই সোনার দেশে সাত সমুদ্রের ওপার থেকে এক মায়াবী দৈত্য এসে পড়লো। সে দৈত্য অন্য দৈত্যের মতন ভয়ঙ্কর চেহারা নয়। বরং রূপবান রাজপুত্রের মতন দেখতে। মায়াবী দৈত্য এদেশে এসে প্রথমে এদেশের মানুষদের সঙ্গে এমন সুন্দর ব্যবহার করতে লাগলো যে সকলেই তার রূপে-গুণে মুগ্ধ হয়ে পড়লো। যখন তার প্রতি সন্দেহ বা অবিশ্বাসের ভাব কারুরই রইলো না, তখন মায়াবী ধীরে ধীরে তার মায়াজাল বিস্তার করতে লাগলো। এত বড়ো সোনার দেশ। দেশে মানুষ আর রইলো না। বেশির ভাগ মানুষই হয়ে গেল ছাগল গরু ভেড়া গাধা আর কুকুর। মায়াবী দৈত্যের মায়ার ছোঁয়ায় সমস্ত দেশ হয়ে গেল নির্জীব, নির্বল, জবুথুবু। মানুষগুলির চেহারা বাইরে মানুষই রয়ে গেল বটে, ভিতরে কিন্তু তারা আর কেউ মানুষ রইলো না। কেউ সাপ, কেউ কেঁচো, কেউ পোকা, কেউ পিঁপড়ে, কেউ কেউ বা বাঘ-ভাল্লুকও হয়ে গেল। মানুষ-চেহারার বলদগুলো অহর্নিশি গাড়ী টানচে, গাধাগুলো মুখ বুজে ভার বইচে, গরুগুলোর দোহন চলচে, কুকুরগুলো অন্ধ প্রভু-ভক্তিতে অন্যের প্রাণ নিচ্চে আর নিজেরও প্রাণ দিচ্চে। বিদেশী দৈত্যের কুহক-মায়ায় সোনার দেশ ছারেখারে গেল। মায়া-কুয়াসায় ঘুমন্ত দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন একজন জাগ্রত মানুষ—মহা যোগী পুরুষ তিনি। ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তোলাই তাঁর একমাত্র ব্রত। সর্বত্যাগী মহাদেবের ভক্ত তিনি। নিঝুম ঘুমন্ত দেশের মহাশ্মশানে একলা ঘুরে ঘুরে শব-সাধনা করে মরা মানুষদের জ্যান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। দিনের পর দিন কেটে যায়—মাসের পর মাস- বছরের পর বছরও কাটতে থাকে। মায়াবী দৈত্য সাত সমুদ্রের ওপারে বসে ঘুমন্ত দেশের বুকে নল লাগিয়ে—দেশের রক্ত শুষে শুষে খায়। দেশের মাটির রস শুষেই তার পিপাসা মেটে না, চুষে খায় মানুষের মনুষ্যত্ব । মহা সন্ন্যাসী অবাক্ হয়ে তাকিয়ে দেখেন দৈত্যের কুহক-মায়ার শক্তি। কোটী কোটী মানুষ – সেই দৈত্যেরই রূপ-গুণে মুগ্ধ হয়ে তার মুখের পানে তাকিয়ে আছে। তারই দয়া ভিক্ষে করে জোড়হাতে নিজের দেশে দিন কাটায়। যেন নিজেরাই অন্য দেশ থেকে ভিক্ষুক হয়ে এসেছে! যারা ওদের দেশের রস শুষে খাচ্ছে, ওদের মাকে শিকলে বেঁধে রেখেছে, ওদের মনুষ্যত্ব নষ্ট করে দিয়েছে, তাদেরই ওরা হিতৈষী বন্ধু আর গুরু বলে পূজো করচে। মহা সন্ন্যাসী চললেন হিমালয় পর্বতে। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু—সবচেয়ে সুন্দর অথচ ভয়ঙ্কর যে-পর্বত।
দেব সাহিত্য কুটীর বাংলা সাহিত্যে অন্যতম প্রথম ও প্রধান প্রকাশনা সংস্থা৷ এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা কাল ১৮৬০৷ দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত অভিধান এবং ধর্মগ্রন্থ প্রথম থেকেই সবজ্যিনপ্রিয়৷ এছাড়া শিশু ও কিশোর পাঠ্য নানা ধরনের বই, ইংরেজি ক্লাসিক্সের অনুবাদ এবং শারদীয়া বার্ষিকী প্রকাশে দেব সাহিত্য কুটীর অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ৷ অধুনা রড়দের এবং ছোটদের জন্য নানা ধরনের গল্প সংকলন, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি এবং কমিকসও প্রকাশ করে চলেছে এই সংস্থা৷ এই সঙ্গে রয়েছে ছোটদের জন্য অসাধারণ একটি মাসিক পত্রিকা শুকতারা যা ৭০ রৎসরেও সগৌরবে এগিয়ে চলেছে৷ আর ৫৮ বছর ধরে রড়দের মনোরঞ্জন করে চলেছে মাসিক নবকল্লোল পত্রিকা৷ ণ্ডণে মানে বাংলা প্রকাশনা শিল্পে দেব সাহিত্য কুটীরইঁ এখনও এক এবং অদ্বিভীয়৷