ভুমিকা যেদিন মানব মেলিল নে । সেই দিন থেকেই মৃগয়া তার অন্যতম অগ্রগণ্য বিলাস। উত্তেজনারও খোরাক এতে প্রচুর, আবার উদরজ্বালা নিবারণেরও এটি একটি প্রকৃষ্ট উপায় ক্ষেত্রবিশেষে। এমন অনেক নরগোষ্ঠী আজও আছে পৃথিবীর গহনতম আরণ্য অঞ্চলগলিতে, মৃগয়ালব্ধ মাংসই যাদের খাদ্য। সভ্য জাতিসমূহের মধ্যে সাম্বৎসরিক মৃগয়াযাত্রা সেদিন পর্যন্ত একরকম বাধ্যতামূলকই ছিল অভিজাতবর্গের পক্ষে ৷ রাজপত রাজাদের আহেরিয়া এই সম্পর্কে স্বতঃই স্মরণে আসে। সে ছিল একটা জাতীয় উৎসবেরই মত । আজকাল পৃথিবীতে রাজাও বিরল, মৃগয়াকে রাজকীয় সম্মান দেওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। তথাপি শৌখিন শিকারীরা এখনও নিয়মিত ‘সফরী’তে বের,চ্ছেন প্রায় রাজোচিত আড়ম্বরেই। কখনও আফ্রিকার অরণ্যে মরতে সিংহ হস্তী কুডু শিকারের জন্য, কখনও বা ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়ার নিবিড় বনে বনে বাঘের সঙ্গে শক্তি পরীক্ষার জন্য। ভারতে বৈদেশিক শিকারীদের পদার্পণ হয় কম, কিন্তু এদেশের জোর বরাত, জিম কর্বেট ও অ্যান্ডারসেনের মত প্রথম শ্রেণীর শিকারীরা এখানেই জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন, নরখাদক শাদলে চিতাদের গ্রাস থেকে অসহায় অর্ধবন্য আদিবাসীদের রক্ষাব্রত গ্রহণ করে। শিকার, বলতে গেলে, লড়াইয়েরই রকমফের। ভারতের কথাই ধরা যাক! একদিকে এক খল, বেপরোয়া, ক্ষুধার্ত, হিংস্র মহাশ্বাপদ, অন্যদিকে অজ্ঞ, নিরস্ত্র, ভয়ার্ত, অদৃষ্টবাদী, দুর্বল মানব। এই দাইয়ের সংঘাত যখন হয়, গ্রামকে গ্রাম উজাড় করে গ্রামবাসীর। যখন পালাতে শুরু করে দূরে দূরান্তরে, শব্দ নিজেদের জীবন কয়টি নিয়ে, তখনই ডাক পড়ে কবেট-অ্যান্ডারসেনের মত শিকারীদের ; তাঁরা রাইফেলটি মাত্র সম্বল করে আসেন আতত্রাণের জন্য, কল্পনাতীত ক্লেশ স্বেচ্ছায় বরণ করেন অনাহারে অনিদ্রায়, মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতনের সংকল্প গ্রহণ করে। প্রতি পদক্ষেপে কত-না লোমহর্ষণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের! ওদিকে মাথার উপরে বাজ গর্জায়, পাহাড় জঙ্গল কেপে কেপে ওঠে ঝঞ্ঝার তাড়নে, এদিকে চোখের সম,খে মহাশাদলে লাঙ্গল আফসায়, ঝাঁপিয়ে পড়ে টাটি ছিড়ে নেবার জন্য । সে-কাহিনী পড়তে বসলে কখনও বা বাকের ভিতরটা ধকধক করে ওঠে ত্রাসে নৈরাশ্যে, কখনও বা তাজা রক্ত চনমনিয়ে ছুটতে থাকে শিরায় উপশিরায় উৎসাহে উত্তেজনায় । অ্যাডভেঞ্চারের গল্পে, ডিটেকটিভ উপন্যাসে আমরা উত্তেজনার আবহাওয়া সৃষ্টি করতে চাই কল্পনার সাহায্যে। কিন্তু শিকার কাহিনী যে-উত্তেজনা সঞ্চার করে পাঠকের প্রাণে, তা কল্পনাভিত্তিক আদৌ নয়, কঠোর নগ্ন বাস্তবের বর্ণনা থেকেই তার উদ্ভব। কথায় বলে “Truth is often stranger than fiction.” তারই জ্বলন্ত উদাহরণ এই শিকার কাহিনীগুলি । উত্তর ভারতের কুমায়ূন, দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি এবং আফ্রিকার উগাণ্ডা, অ্যাঙ্গোলা, কেনিয়া, তানজানিয়া, লিবিয়া প্রভৃতি অঞ্চলের ব্যাঘ্র সিংহ হস্তী প্রভৃতি মহাজন্তু শিকারের অবিস্মরণীয় কতকগুলি কাহিনীর সমন্বয়ে এই রোমাঞ্চে উত্তেজনায় ভরপর গ্রন্থখানি রচনা করে আমরা শারদীয়ার উপহার স্বরূপে তুলে দিচ্ছি আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরী তরুণ-তরুণীদের করে। তাঁদের ভাল লাগবে এ বিশ্বাস আমরা রাখি। তাঁদের ভাল লাগলেই ধন্য হব আমরা।
দেব সাহিত্য কুটীর বাংলা সাহিত্যে অন্যতম প্রথম ও প্রধান প্রকাশনা সংস্থা৷ এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা কাল ১৮৬০৷ দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত অভিধান এবং ধর্মগ্রন্থ প্রথম থেকেই সবজ্যিনপ্রিয়৷ এছাড়া শিশু ও কিশোর পাঠ্য নানা ধরনের বই, ইংরেজি ক্লাসিক্সের অনুবাদ এবং শারদীয়া বার্ষিকী প্রকাশে দেব সাহিত্য কুটীর অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ৷ অধুনা রড়দের এবং ছোটদের জন্য নানা ধরনের গল্প সংকলন, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি এবং কমিকসও প্রকাশ করে চলেছে এই সংস্থা৷ এই সঙ্গে রয়েছে ছোটদের জন্য অসাধারণ একটি মাসিক পত্রিকা শুকতারা যা ৭০ রৎসরেও সগৌরবে এগিয়ে চলেছে৷ আর ৫৮ বছর ধরে রড়দের মনোরঞ্জন করে চলেছে মাসিক নবকল্লোল পত্রিকা৷ ণ্ডণে মানে বাংলা প্রকাশনা শিল্পে দেব সাহিত্য কুটীরইঁ এখনও এক এবং অদ্বিভীয়৷