Close
  • Look inside image 1
  • Look inside image 2
  • Look inside image 3
  • Look inside image 4
  • Look inside image 5
  • Look inside image 6
  • Look inside image 7
  • Look inside image 8
  • Look inside image 9
  • Look inside image 10
  • Look inside image 11
  • Look inside image 12
কমলাকান্তের দপ্তর image

কমলাকান্তের দপ্তর (হার্ডকভার)

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

TK. 150 Total: TK. 129
You Saved TK. 21

কমলাকান্তের দপ্তর

কমলাকান্তের দপ্তর (হার্ডকভার)

5 Ratings  |  3 Reviews

TK. 150 TK. 129 You Save TK. 21 (14%)

বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।

book-icon

Cash On Delivery

mponey-icon

7 Days Happy Return

Similar Category eBooks

Customers Also Bought

Product Specification & Summary

“কমলাকান্তের দপ্তর” বইয়ের ভূমিকা
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮–১৮৯৪) তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যের জন্য নন্দিত হয়েছেন যেমন, নিন্দিতও হয়েছেন তেমনই। বাংলা সাহিত্যের পাঠক ও সমালোচকদের মধ্যে অধুনা অবধি তাঁকে নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। কেউ কেউ তাঁকে অভিষিক্ত করেছেন সাহিত্য-সমাটের শিরোপায়, আবার অনেকেই তাঁর কপালে এঁকে দিয়েছেন সাম্প্রদায়িকের কলঙ্ক-তিলক। তবু তাঁর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্যই যথাৰ্থ বলে বিবেচিত হবার দাবি রাখে। তিনি তাঁকে অভিহিত করেছেন “সাহিত্যে কর্মযোগী” এবং “সব্যসাচী” হিশেবে। তাঁর ভাষায়, “সাহিত্যের যেখানে যাহা কিছু অভাব ছিল সর্বত্রই তিনি আপনার বিপুল বল এবং আনন্দ লইয়া ধাবমান হইতেন। কি কাব্য, কি বিজ্ঞান, কি ইতিহাস, কি ধর্মগ্রন্থ যেখানে যখনই তাঁহাকে আবশ্যক হইত সেখানে তখনই তিনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত হইয়া দেখা দিতেন। নবীন বঙ্গ-সাহিত্যের মধ্যে সকল বিষয়েই আদর্শ স্থাপন করিয়া যাওয়া তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল। বিপন্ন বঙ্গভাষা যেখানেই তাঁহাকে আর্তস্বরে আহ্বান করিয়াছে সেখানেই তিনি প্রসন্ন চতুৰ্ভুজ মূর্তিতে দেখা দিয়াছেন।” এখানেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবিনশ্বর অবদান; এখানেই তাঁর কাছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অপরিশোধ্য ঋণ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তিনি দিয়েছেন যথাযথ শিল্পরূপ, প্রাণের জাদু সঞ্চার করেছেন এর অন্তরে, আপন প্রতিভাবলে একে পৌঁছে দিয়েছেন তুঙ্গস্পর্শী মানে, প্রতিষ্ঠা করেছেন গৌরবোজ্জ্বল মহিমায়।
দুৰ্গেশনন্দিনী (১৮৬৫), কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬), মৃণালিনী (১৮৬৯), বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা (১৮৭৩), যুগলাঙ্গুরীয় (১৮৭৪), চন্দ্রশেখর (১৮৭৫), রাধারাণী (১৮৭৬), রজনী (১৮৭৭), কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮), রাজসিংহ (১৮৮২), আনন্দমঠ (১৮৮২), দেবী চৌধুরাণী (১৮৮২) ও সীতারাম (১৮৮৭)- এই চৌদ্দটি উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্রের ঔপন্যাসিক প্রজ্ঞার অনুপম শৈল্পিক প্রকাশ উৎকীর্ণ হয়ে আছে। আবার প্রাবন্ধিক হিশেবে তাঁর প্রাজ্ঞ মনস্বিতাকে ধারণ করে আছে লোকরহস্য (১৮৭৪), বিজ্ঞানরহস্য (১৮৭৫), সাম্য (১৮৭৯), মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত (১৮৮৪), কমলাকান্ত (১৮৮৫), কৃষ্ণচরিত্র (১৮৮৬), বিবিধ-প্রবন্ধ (১৮৮৭), ধৰ্মতত্ত্ব, (১৮৮৮), শ্ৰীমদ্ভাগবদগীতা (১৯০২), দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম ইত্যাদি প্ৰবন্ধগ্রন্থ। তিনি একদিকে যেমন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, অপরদিকে তেমনই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা প্রাবন্ধিক। তাই তাঁর ব্যক্তিত্বে পরিদৃষ্ট হয়ে ওঠে সৃষ্টিশীল প্রতিভা ও সম্পন্ন মনীষার সুষ্ঠু সমন্বয়। আর এরই প্রসূন তাঁর ‘কমলাকান্তের দপ্তর।’ (১৮৭৫)।
বঙ্কিমচন্দ্রের সমগ্ৰ সাহিত্যকর্মের মধ্যে ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। বাংলা সাহিত্যে এর কোনো দ্বিতীয় নেই, এটা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাই এর গুরুত্বও অপরিমেয়। তাঁর ঔপন্যাসিক সত্তা প্রাবন্ধিক সত্তার আশ্চর্য সমন্বয় ঘটেছে এই রচনায়। বস্তুত, বঙ্কিমচন্দ্রের সৃজনশীলতা ও মননশীলতার অপরূপ সার্থক যুগলবন্দি ‘কমলাকান্তের দপ্তর’।
বাংলা সাহিত্যে কমলাকান্তের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৮৭৩ সালে, ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায়। ‘কমলাকান্তের দপ্তর’র সবগুলো রচনাই প্রকাশিত হয়েছিল এই পত্রিকায়। এগুলো হচ্ছে— (১) একা— ‘কে গায় ঐ?’ (২) মনুষ্যফল, (৩) ইউটিলিটি বা উদর-দর্শন, (৪) পতঙ্গ, (৫) আমার মন, (৬) চন্দ্রালোকে, (৭) বসন্তের কোকিল, (৮) স্ত্রীলোকের রূপ, (৯) ফুলের বিবাহ, (১০) বড়বাজার, (১১) আমার দুর্গোৎসব, (১২) একটি গীত, (১৩) বিড়াল ও (১৪) মশক। এদের মধ্যে ‘চন্দ্রালোকে” ও “মশক’ অক্ষয়চন্দ্র সরকারের এবং “স্ত্রীলোকের রূপ’ রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের লেখা। অবশিষ্ট এগারোটি প্রবন্ধের সমবায়ে ১৮৭৫ সালে প্রকাশ পায় ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র রচনা করেন ‘কমলাকান্তের পত্র’। এর মধ্যে রয়েছে। পাঁচটি প্রবন্ধ : (১) কি লিখিব? (২) পলিটিকস্, (৩) বাঙ্গালির মনুষ্যত্ব, (৪) বুড়া বয়সের কথা (৫) কমলাকান্তের বিদায়। কমলাকান্তসংক্রান্ত সর্বশেষ রচনা ‘কমলাকান্তের জোবানবন্দী’। কমলাকান্তবিষয়ক বাঙ্কিমচন্দ্রের সমস্ত রচনা একত্রে ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘কমলাকান্ত” শিরোনামার গ্রন্থে।
বাংলা সাহিত্যে কমলাকান্ত এক অভূতপূর্ব সৃষ্টি, অভিনব চরিত্র। কবি, দার্শনিক, ভাবুক, সমাজচিন্তাবিদ, ইতিহাসসন্ধানী, মানবপ্রেমিক, স্বদেশপ্রেমী, হাস্যরসিক, জীবনরসিক: স্রষ্টা ও দ্রষ্টা বঙ্কিম-সত্তার সামগ্রিক আত্মপ্ৰক্ষেপ ও বঙ্কিম-মানসের নির্যাস নিয়ে প্রস্ফুটিত এই চরিত্র। ‘ইতিপূর্বে ইউরোপে এইভাবে সৃষ্ট চরিত্রের সহিত স্রষ্টার মিলন একাধিক কবি ও ঔপন্যাসিকের ক্ষেত্রে ঘটিয়াছে। কিন্তু বাংলাদেশে ও সাহিত্যে, বোধহয় আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যে সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তার অভিন্ন-হৃদয়তা এই প্রথম। কল্পনার ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র এই নূতন পদ্ধতির আমদানি করিলেন।” তাই রস সৃষ্টির আকরে ও আবহে কমলাকান্তবিষয়ক রচনাসমূহে বঙ্কিমচন্দ্র অভিব্যক্ত করেছেন জীবনসংক্রান্ত তাঁর গভীর চিন্তা ও মর্মস্পর্শী বোধ। ‘এখানে মানব-চরিত্র সম্বন্ধে তাঁর সূক্ষ্ম দৃষ্টি ও গভীর জ্ঞান অত্যন্ত স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। মানবজীবনের নানা ভুলত্রুটি নিতান্ত স্নেহকরুণ দৃষ্টিতে সংযত শুভ্ৰ হাস্যরস রসিকতার সাহায্যে এ রস রচনায় তিনি উদঘাটন করেছেন।’ গভীরতর বিবেচনায়, তাঁর সমগ্ৰ উপন্যাস ও প্রবন্ধসাহিত্যের ভাববীজ নিহিত আছে। এই রচনায়। আর এ-কারণেই ‘কমলাকান্তের দপ্তরকে বঙ্কিম-সাহিত্যের ‘অনুবিশ্ব’ আখ্যা দেওয়া যেতে পারে।
বলা হয়ে থাকে যে, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর মূলত ডি কুইন্সির ‘দি কনফেশনস অব এ্যান ইংলিশ অপিয়াম-ইটার’ (The Confessions of an English opeum-eater) গ্রন্থের অনুসরণে রচিত। ‘কমলাকান্তের শিল্প-পরিকল্পনায় বিদেশি প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যে এ-ধরনের রচনার কোনো পূর্বনিদর্শন ছিল না। ফলে, ডি কুইন্সির ‘কনফেশন’ থেকে বঙ্কিমচন্দ্র ‘কমলাকান্ত’ সৃষ্টির প্রেরণা পেয়েছিলেন, এ-কথা সত্য বলে মেনে নিতে বাধা নেই। তবে, দুজনের রচনা পাশাপাশি বিশ্লেষণ ও অনুধাবন করলে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, এ—দুটির স্বরূপ আলাদা, মেজাজ পৃথক, লক্ষ্যও ভিন্ন। “নেশাগ্ৰস্ত কমলাকান্তের মুখ দিয়ে নানা মন্তব্য করানো ডি কুইন্সির ‘কনফেশনে’র অনুরূপ সন্দেহ নেই, যদিও ডি কুইন্সির মন্তব্যগুলির সঙ্গে কমলাকান্তের গভীর চিন্তাদ্যোতক নৈর্ব্যক্তিক মন্তব্য ও সিদ্ধান্তগুলির তুলনা চলে না। ডি কুইন্সির আফিমখোর তার নিজের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাধারা মাত্র বর্ণনা করে গিয়েছে। কমলাকান্তের বস্তুত কোনো ব্যক্তিগত জীবন নেই। সে নিরাসক্ত, আত্মীয় পরিজনহীন, সংসারবিমুখ। তার চিন্তা বস্তুতই নিজেকে নিয়ে নয়, সংসার ও জীবনের সাধারণ প্রকৃতি ও ধর্ম নিয়ে।” ডি কুইন্সির ‘কনফেশনে’ যেখানে নিজস্ব জীবনের রোমান্টিক অনুভূতিমালাকে কাল্পনিক ও নাট্যক বাতাবরণে প্রকাশ করা হয়েছে, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তে” সেখানে ব্যক্ত হয়েছে। জীবনরসরসিকতা, মানবধর্মিতা ও দার্শনিকতা। আবার রচনারীতির ক্ষেত্রেও দুটির মধ্যে পার্থক্য লক্ষণীয়: ‘কনফেশনে’র ‘বর্ণনাপ্রবাহ একটানা— ছেদহীন’, কিন্তু ‘কমলাকান্তে’র বঙ্কিমিরীতি ‘কখনো বিশ্লেষণাত্মক, কখনো কল্পনা-লীলাময়’। ফলে জীবনবীক্ষণ, বিষয়ভাবনা, কল্পনাবিহার ও রচনারীতিতে ‘কনফেশনে’র সঙ্গে ‘কমলাকান্ত’র সাদৃশ্যের চাইতে বৈসাদৃশ্যই অধিকতর প্রকট হয়ে ওঠে। উপরন্তু, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ বঙ্কিম-মানসের সমগ্র রূপের সম্পূর্ণ অভিব্যক্তি বলেই ঔপন্যাসিক কল্পনা এবং প্রবন্ধচিন্তার একটি সমন্বয়রাপে বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।’
‘কমলাকান্তের দপ্তরে’র প্রাণসম্পদ এর জীবনদর্শন। আর এই জীবনদর্শনের মূলমন্ত্র হচ্ছে, মানবমুখিনতা ও মানবকল্যাণকামিতা। এই জগৎসংসারে আত্মপর ভেদাভেদশূন্য হয়ে সমগ্র মানবসমাজের মধ্যে একাত্ম হয়ে যাওয়া, মানুষের মঙ্গলসাধন করা এবং পরের হিতে আত্মবিসর্জন দেওয়ার মধ্যেই মানবজীবনের চূড়ান্ত সার্থকতা নিবদ্ধ : এই জীবনোপলব্ধি এই গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধে নেপথ্য রাগিণীর মতো প্রবহমান।
‘একা’ প্রবন্ধে কমলাকান্তের অনুভব:
এই বহুজনাকীর্ণ নগরীমধ্যে, এই আনন্দময় অনন্ত জনস্রোতোমধ্যে, আমি একা। আমিও কেন ঐ অনন্ত জনস্রোতোমধ্যে মিশিয়া, এই বিশাল আনন্দতরঙ্গ তাড়িত জলবুদ্বুদসমূহের মধ্যে আর একটি বুদ্বুদ না হই? বিন্দু বিন্দু বারি লইয়া সমুদ্র; আমি বারিবিন্দু এ সমুদ্রে মিশাই না কেন?
‘আমার মন’ প্ৰবন্ধে তাঁর ভাবনা:
আমি অনেক অনুসন্ধান করিয়া দেখিতেছি, পরের জন্য আত্মবিসর্জন ভিন্ন স্থায়ী সুখের অন্য কোন মূল নাই।
‘বিড়াল’ প্রবন্ধে তাঁর উপলব্ধি:
ধর্ম কী? পরোপকারেই পরম ধর্ম।
মানবপ্রীতি ও মানবধর্মের এই জয়গানের উদ্বোধনে ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ উজ্জ্বল ও ঐশ্বর্যময়।
শুধু মানবপ্রেম নয়, ‘কমলাকান্তের দপ্তরে’ সমাজসচেতনাও সবিশেষ লক্ষযোগ্য। কমলাকান্ত কখনো নিপুণভাবে সমাজ পর্যবেক্ষণ করেছে, কখনো সমালোচনার মাধ্যমে তীক্ষা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ-শ্লেষ-কটাক্ষে ও মন্তব্যে তুলে ধরেছে সমাজের বিভিন্ন অন্যায়-অসঙ্গতি, কখনো—বা দিয়েছে আদর্শের ইঙ্গিত, আবার কখনো সামাজিক বিন্যাসকে বিশ্লেষণ করেছে। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে। তার সমাজভাবনার মৌলসূত্র হচ্ছে, সমাজের কল্যাণসাধন। ‘আমার মন’ প্রবন্ধে এর পরিচয় পাওয়া যায়:
যদি পারিবারিক স্নেহের গুণে তোমাদের আত্মপ্রিয়তা লুপ্ত না হইয়া থাকে, যদি বিবাহনিবন্ধনে তোমাদের চিত্ত মার্জিত না হইয়া থাকে, যদি আত্মপরিবারকে ভালোবাসিয়া তাবৎ মনুষ্যজাতিকে ভালোবাসিতে না শিখিয়া থাকো, তবে মিথ্যা বিবাহ করিয়াছ; কেবল ভূতের বোঝা বহিতেছ। ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি বা পুত্ৰমুখ নিরীক্ষণের জন্য বিবাহ নহে। যদি বিবাহবন্ধে মনুষ্যচরিত্রের উৎকর্ষ সাধন না হইল, তবে বিবাহের প্রয়োজন নাই। ইন্দ্রিয়াদি অভ্যাসের বশ; অভ্যাসে এ সকল একেবারে শান্ত থাকিতে পারে। বরং মনুষ্যজাতি ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করিয়া পৃথিবী হইতে লুপ্ত হউক, তথাপি যে বিবাহে প্রীতিশিক্ষা না হয়, সে বিবাহে প্রয়োজন নাই|’
কমলাকান্তের মতে, আত্মপরায়ণতাকে প্রীতিবৃত্তির মাধ্যমে বিশ্বপরায়ণতায় উন্নীত করা উচিত; আর এতেই মানবজীবনের আবিষ্ট সিদ্ধি।
‘বিড়াল’ প্রবন্ধটি সমাজচিন্তার দৃষ্টান্তরূপে অসাধারণ। এতে কমলাকান্ত ও বিড়াল ধনী-দরিদ্রের প্রভেদ নিয়ে আলোচনা করেছে। বিড়ালের মতে, সমাজে বিত্তশালীদের অপরাধেই বিত্তহীনেরা চোর হয়ে ওঠে। কেননা, বিত্তবানেরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধনসম্পদ তাদের কুক্ষিগত করে রাখে; কিন্তু দরিদ্ররা তাদের গ্রাসাচ্ছাদনের নৃত্যুনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত। তাই সামাজিকভাবে দরিদ্র চোরের নয়, বরং ধনী অপরাধীরই শাস্তিবিধান কর্তব্য। বিড়ালের বক্তব্য:
আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি? খাইতে পাইলে কে চোর হয়? দেখ, যাঁহারা বড় বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া উঠেন, তাঁহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধাৰ্মিক। তাঁহাদের চুরি করিবার প্রয়োজন নাই বলিয়াই চুরি করেন না। কিন্তু তাঁহাদের প্রয়োজনাতীত ধন থাকিতেও চোরের প্রতি যে মুখ তুলিয়া চাহেন না, ইহাতেই চোরে চুরি করে। অধৰ্ম চোরের নহে— চোরে যে চুরি করে, সে অধৰ্ম কৃপণ ধনীর। চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শতগুণে দোষী। চোরের দণ্ড হয়, চুরির মূল যে কৃপণ, তাহার দণ্ড হয় না কেন?
এ-প্রবন্ধে সামাজিক অন্যায় ও অসঙ্গতির আন্তর্সত্য চমৎকারভাবে উন্মোচিত হয়েছে। ‘কমলাকান্তের দপ্তরে’ সমাজচিন্তা ছাড়াও স্বদেশপ্রেম ও স্বাজাত্যবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
কমলাকান্তের বাংলা সাহিত্যবিষয়ক চিন্তাও যথেষ্ট গুরুত্ববহ। বাঙালি লেখকের বিদ্যাহীনতা, শিক্ষাবিমুখতা, নিরর্থক আড়ম্বরপ্রিয়তা ও অনুকরণপ্রবণতা কমলাকান্তের বিদ্রাপে ও কটাক্ষে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ:
এক
বিদ্যার জন্য বিশেষ লিখিতে বা পড়িতে শিখার প্রয়োজন নাই, গ্রন্থ লিখিতে, সম্বাদ পত্রাদিতে লিখিতে জানিলেই হইল। কেহ কেহ তাহাতে আপত্তি করেন যে, যে লিখিতে জানে না, সে পত্রাদিতে লিখিবে কী প্রকারে? আমার বিবেচনায় এরূপ তর্ক নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর। কুম্ভীরশাবক ডিম্ব ভেদ করিবামাত্র জলে গিয়া সাঁতার দিয়া থাকে, শিখিতে হয় না। সেইরূপ বিদ্যা বাঙ্গালীর স্বতঃসিদ্ধ, তজ্জন্য লেখাপড়া শিখিবার প্রয়োজন নাই।
—ইউটিলিটি বা উদর-দর্শন।
দুই
আর যদি গুরু বিষয়েই আপনার অভিরুচি হয়, তবে বলিবেন, তাহার কি প্রকার অলঙ্কার সমাবেশ করিব। আপনি কোটেশন ভালোবাসেন, না ফুটনোটে আপনার অনুরাগ। যদি কোটেশন বা ফুটনোটের প্রয়োজন হয় তবে কোন ভাষা হইতে দিব, তাহাও লিখিবেন। ইউরোপ ও আশিয়ার সকল ভাষা হইতেই আমার কোটেশন সংগ্ৰহ করা হইয়াছে— আফ্রিকা ও আমেরিকার কতকগুলি ভাষার সন্ধান পাই নাই। কিন্তু সেই সকল ভাষার কোটেশন আমি অচিরাৎ প্ৰস্তুত করিব, আপনি চিন্তিত হইবেন না।
-কী লিখিব?
রস-রচনা হিশেবেও ‘কমলাকান্তের দপ্তরে’র গুরুত্ব অপরিসীম। কমলাকান্তের রসিকতা তার ব্যক্তিত্বের দ্যোতক। তাই যে-কোনো বিষয় হাস্যরসে হয়ে ওঠে উপভোগ্য এবং অভীষ্ট লক্ষ্যভেদে অব্যৰ্থ। কমলাকান্তের হাস্যরস তার অন্তরের মৌলিক উৎসারণ, রবীন্দ্রনাথ একে বর্ণনা করেছেন নির্মল শুদ্ধহাস্যরূপে। ‘এই হাস্যরস জীবনের অন্তর্লোক থেকে উৎসারিত ও ব্যক্তিত্বের স্পর্শে সঞ্জীবিত।’ ‘কমলাকান্তের দপ্তরে’ হাস্যরসের সঙ্গে অপূর্ব মিশ্রণ ঘটেছে কল্পনাবৃত্তির। জীবনের সুতীক্ষ বিশ্লেষণে ও সমালোচনার সুতীব্ৰ কটাক্ষে এই হাস্যরস কোথাও সংযত, কোথাও অবারিত, কোথাও উচ্চকণ্ঠে উতরোল, কোথাও স্নিগ্ধ সজল, কোথাও প্রাণখোলা উচ্ছাস, কোথাও বিষন্ন আভাস। প্রকৃতপক্ষে, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ একটি তান-লয়-সুদ্ধ সঙ্গীতের মতো আমাদের রসবোধকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দান করে।”
বঙ্কিমচন্দ্রের অন্যতম জীবনীকার শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বঙ্কিম-জীবনী’ গ্রন্থের “শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ শিরোনামার অধ্যায়ে উল্লেখ আছে যে, বঙ্কিমচন্দ্র ‘কমলাকান্তের দপ্তর’কে তাঁর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বিবেচনা করতেন। জীবনীকার লিখেছেন, তাঁর ভগিনীপতি কৃষ্ণধন মুখোপাধ্যায় একদা বঙ্কিমচন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি তাঁর রচনার মধ্যে কোনটিকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন? উত্তরে বঙ্কিমচন্দ্র কিছুমাত্র চিন্তা না-করে হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। প্রকৃত অর্থেই, এ গ্রন্থকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ রচনা হিশেবে মেনে নিতে কোনো দ্বিধা-কুষ্ঠা জাগে না। কেননা, “হাসির সঙ্গে করুণের, অদ্ভুতের সঙ্গে সত্যের, তরলতার সহিত মর্মদায়িনী জ্বালার, নেশার সঙ্গে তত্ত্ববোধের, ভাবুকতার সহিত বস্তুতন্ত্রতার, ক্লেশের সহিত উদারতার এমন মনোমোহন সমন্বয় কে কবে দেখিয়ছে?
মারুফুল ইসলাম
Title কমলাকান্তের দপ্তর
Author
Publisher
ISBN 9841801213
Edition 6th Edition, 2016
Number of Pages 95
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

Sponsored Products Related To This Item

Reviews and Ratings

4.6

5 Ratings and 3 Reviews

sort icon

Product Q/A

Have a question regarding the product? Ask Us

Show more Question(s)
loading

Similar Category Best Selling Books

prize book-reading point
Superstore
Up To 65% Off
Recently Viewed
cash

Cash on delivery

Pay cash at your doorstep

service

Delivery

All over Bangladesh

return

Happy return

7 days return facility

0 Item(s)

Subtotal:

Customers Also Bought

Are you sure to remove this from bookshelf?

Write a Review

কমলাকান্তের দপ্তর

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

৳ 129 ৳150.0

Please rate this product