"বিষাদ সিন্ধু" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: ‘বিষাদ-সিন্ধু’-র প্রথম পর্ব মহরম পর্বে’ ছাব্বিশটি অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে দামেস্ক’র রাজা মাবিয়ার ছেলে এজিদের কামনা-বাসনা, ব্যর্থতা এবং প্রতিহিংসার কথা। হাসানের স্ত্রী জয়নাবকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার বাসনা করেছিল এজিদ। কিন্তু স্বামীভক্ত জয়নাব এজিদের খারাপ মতলবে সাড়া দেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এজিদ নানা কৌশলে জয়নাবকে পাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। এজিদের মন্ত্রী মারওয়ান মদিনায় মায়মুনা নামের এক বৃদ্ধার সাহায্যে হাসানের পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করে। হাসানের দ্বিতীয় স্ত্রী জায়েদাকে দামেস্কের রাজরানী হওয়ার লােভ দেখিয়ে হাসানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে। কিন্তু জায়েদা এজিদের কাছে পুরস্কার চাইতে গিয়ে মৃত্যুকেই বরণ করে। হাসানকে হত্যা করার পর হােসেনকেও হত্যা করার জন্য এজিদের মন্ত্রী মারওয়ান তার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। হােসেন তখন হজরত মােহাম্মদের পবিত্র সমাধি মন্দিরে থাকতেন। এজিদের সেনাবাহিনী এখানে আক্রমণ করতে পারে- এই তথ্য দিয়ে মারওয়ান গােপনে হােসেনকে সরে যেতে বলে। হােসেন তখন কুফার শাসনকর্তার আমন্ত্রণে কুফার দিকে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু পথভুলে হােসেন ও তার সঙ্গীরা কারবালায় গিয়ে পৌঁছেন। ফোরাতে এজিদের সেনাবাহিনী হােসেন ও তার সঙ্গী পরিবারের সঙ্গে অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয়। হােসেনের সঙ্গীরা পরাজিত হয়। সীমার নামক এক পাষণ্ড যােদ্ধার হাতে হােসেন মৃত্যুবরণ করেন। হােসেনের কাটামুণ্ডু নিয়ে সীমার দামেস্ক রওয়ানা হয়। | এজিদ ও তার বাহিনীর পাষণ্ডতা, পৈশাচিকতা ও বর্বরতার চিত্র লেখক মীর মশাররফ হােসেন দারুণ বিশ্বস্ততার সঙ্গে অঙ্কন করেছেন। পাঠক হাসান-হােসেনের প্রতি শােকাতুর হয় বেদনার্ত হয়, আবার এজিদের প্রতি ক্ষুব্ধ ও ঘৃণার্ত হয়। বিস্তারিত জানতে বইটি অবশ্যই পড়ুন.....
(নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ১৯১২) ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দাীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা গদ্যের ঊণ্মেষকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিষাদ সিন্ধু নামক ঐতিহাসিক রচনার জন্য সপুরিচিত ও সাধারণ্যে জনপ্রিয়। তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর বলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু কিছু গবেষক তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর বলে দাবী করেন। তিনি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং দৌলতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আঠার বছরে বয়সে তারঁ পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সাথে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালে দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়।