ভূমিকা `আমি কিছুদিন তাঁর বৃহৎ জীবনের তীরে থেকে কতকটা যেন মহত্ত্ব সঞ্চয় করতে পেরেছি। তিনি তাঁর নিজের সম্বন্ধে যে বই লিখেছেন সেটা পড়ে আশ্চর্য হতে হয়। সে বইখানি একটি পরিণত মহৎ জীবনে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। সেটা পড়লে আমার হৃদয়ে একপ্রকার অনির্দ্দেশ্য আশার সঞ্চার হয়।বাঙালা ভাষায় এই একটি রীতিমত বই লেকা হল’-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী সম্পর্কে। ‘তাঁহার রচনায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের খাঁচায় আবদ্ধ প্রবন্ধ-পাখী যেন ব্যক্তিমনের খোলা জানালা দিয়া মুক্তিলাভ করিয়া অসীম নভোবিহারের প্রবন্ধ আত্মগত ভাবোচ্ছ্বাসের, মন্ময় অন্তরঙ্গতার একটি নুতন সুরে বাজিয়ে উঠিয়াছে। তাঁহার এই সুরটি পরবর্তী যুগে তাঁহার পুত্র রবীন্দ্রনাথের আরও প্রসারিত ও বিচিত্র গ্রামে ধ্বনিত হিইয়া প্রবন্ধের নূতন রূপবিধান করিয়াছে। দেবেন্দ্রনাথের রচনার বিষয়-বৈচিত্র্য ততটা ছিল না; তৎপরিবর্তে ছিল ভাবানুভূতির প্রগাঢতা’-শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী সম্পর্কে।সাহিত্যের এই প্রখ্যাত অধ্যাপক একই পুস্তকের ১৮৮ পৃষ্ঠায় বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কবি-পরিচয়ই প্রধান হইলেও, গদ্যশিল্পীরূপে তাঁহার প্রতিষ্ঠা প্রায় তুল্যমূল্য স্থানের অধিকারী। এই দ্বিবিধ মুকুট আর কোন সাহিত্যিকের শিরে সমান মর্যাদার সহিত পরানো যায় কি না সন্দেহ।’ গদ্যশিল্পী রবীন্দ্রনাথের এই শিল্পীত গদ্যের প্রাথমিক আদর্শ তাঁর পিতার গদ্য বলেই মনে হয়, যার শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন মহর্ষির আত্মজীবনী।
আবদুশ শাকুর : জন্ম ১৯৪১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, নােয়াখালী জেলার রামেশ্বরপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ এম.এ, হল্যান্ডের আই.এস.এস থেকে অর্থনীতিতে এম.এস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপনা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে যােগদান এবং বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসাবে অবসরগ্রহণ। পড়াশােনা করেন বিবিধ বিষয়ে এবং নানান ভাষায় লেখালেখির বিষয় কথাসাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ, সংগীত, সমাজতত্ত্ব ও নিসর্গ। লেখেন ঢাকার অভিজাত সকল পত্র-পত্রিকায় এবং কলকাতার বিশিষ্ট মাসিক শহর একুশ শতক’ ও ‘মিলেমিশে’ ইত্যাদিতে। তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘চিরনতুন রবীন্দ্রনাথ’ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমী এবং সঙ্গীত সংবিৎ শিল্পকলা একাডেমী। বাকি গ্রন্থাবলির প্রকাশক ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স, ঐতিহ্য, ও রােদেলা এবং কলকাতার দীপ প্রকাশন, প্রতিভাস ও একুশ শতক || আবদুশ শাকুর ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী। অ্যাওয়ার্ড' পান ছােটগল্পের জন্য। গল্পসমগ্র'র জন্য পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি থেকে ‘অমিয়ভূষণ পুরস্কার’ পান ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালে প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই’ পুরস্কার পান মননশীল প্রবন্ধগ্রন্থ ‘গােলাপসংগ্রহ’র জন্য। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য ২০০৯ সালে পান ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার' এবং ২০১১ সালে ‘শ্রুতি সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।