গ্রাম থেকে উঠে আসা, মাঠের সবুজের রং শুঁকে বড় হওয়া ধানের ক্ষেতে সে ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে যায় তার সুর ছুঁতে চাওয়া এক তরুন এই মহানগরে আসলো। বুকে তার অফুরান স্বপ্ন। মঞ্চে তুলে ধরবে জীবনের কাব্য আর স্বপ্ন সুর পাবে বাঁশির সুরে। তারপর দীর্ঘ পঁচিশ বছরের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সংস্কৃতির খেরো খাতায় যোগ হয়েছে কিছু অভিজ্ঞতার মিশেল- যা একান্তই মাঠ পর্যায়ের, তৃণমূলে থাকা এক সংস্কৃতি পাগল নাট্যকর্মীর ভাবনা। এই বইয়ের বিষয় নির্বাচন ও বক্তব্য সেই কথাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতির সাথে মিশে গেছে যাত্রা, পালাগানের পথ দিয়ে আসা মঞ্চ নাটক। তাই বাঙালির মঞ্চভাবনা ও বাঙালি লোকসংস্কৃতির কথকতা যদি একসাথে গাঁথা যায় তবে ভবিষ্যতের কোন মঞ্চকর্মী হয়তো চিন্তার খোরাক পাবে। নাটকের জন্য ঘুরেছি বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামে। বুঝতে চেষ্টা করেছি শেকড়ের মানুষ ও তাদের যাপিত জীবনকে। এই প্রবন্ধ গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায় সেই অনুসন্ধানের ছাপচিত্র। বাংলার ষড় ঋতুর যে বৈচিত্র, আমাদের সংস্কৃতির যে সৌন্দর্য, বাঙালির যে ঐতিহ্য তা সম্মানজনকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে যে সনাতন সত্য ও সুন্দরের পরিচয় আমরা পাই- তাহলো কোন কৃত্রিমতা নয়, এর আমেজ আনন্দে ভরপুর। বাংলাদেশের মানুষ যেমন মাটির, এ দেশের সুরও তেমনি বৈচিত্র মাধর্য ও ভাবসমদ্ধ।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে উত্তম চক্রবর্তীর জন্ম। পিতা : স্কুল শিক্ষক প্রয়াত বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী, মাতা : ইন্দিরা চক্রবর্তী। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে উত্তম চক্রবর্তীর বেড়ে ওঠা। পিতৃব্য ডা: ভূবনেশ্বর চক্রবর্তী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের গুণী শিল্পী। জ্যাঠামহাশয় ডা: ভুবনেশ্বর ছিলেন লেখকের প্রেরণার উৎস। কিশাের বয়সেই উত্তমের বিকাশ ঘটেছিল বাদ্য-বাজনার আকাঙ্ক্ষা। ১৯৮৫ সালে ঢাকার বিখ্যাত নাট্যদল আরণ্যকের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে তার দ্বৈত ভূমিকা ছিল অভিনেতা ও বাদন পরিচালকের। বর্তমানে প্রাচ্য নাটের সাথে জড়িত উত্তমের সফল ভূমিকার অভিব্যক্তি ঘটেছে অনেকগুলাে একক অনুষ্ঠানে। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য-বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, হােটেল শেরাটন উইন্টার গার্ডেন, রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, জার্মান কালচার ইন্সটিটিউট এবং বঙ্গভবন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ১৯৯৭-এ লস এঞ্জেলস নগরে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে সফল ভূমিকা রেখেছেন উত্তম চক্রবর্তী।