ফ্ল্যাপে লিখা কথা ছড়ার সঙ্গে লুৎফর রহমান রিটনের নাম যতোটা চটজলদি প্রাসঙ্গিক হয়ে ধরা দেয় ততোটা সাহিত্যের অন্য মাধ্যমের সঙ্গে দেয় না। এর পেছনে নিহিত কারণ অবশ্য ছড়ার ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যের তুঙ্গতা। কিন্তু এ-কথা ভুললেও চলবে না যে ছোটদের-বড়দের উভয়েরই জন্য সূক্ষহাস্যরমন্ডিত স্বতন্ত্র এক গদ্যেরও তিনি কারয়িতা। ছড়ার পাশাপাশি ছোটদের জন্য যে অনেক ধরনের গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেছেন সেটা কোনও অজানা খবর নয়। ছোটদের গল্পের বই নিখোঁজ সংবাদ (১৯৮৬) দিয়ে শুরু হয়েছিল যে যাত্রার তা ছোটদের উপন্যাস ঝন্টুপন্টুদের গোয়েন্দাগিরি (১৯৯২), ভূতের ডিমের ওমলেট (১৯৯৯) ও টোকাই আমিন টোকাই বেড়াল (২০০০)-এর মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই প্রবাহই আর একটু অগ্রসর হল বাচ্চা হাতির কান্ডকারখানা উপন্যাসের মাধ্যমে। লুৎফর রহমান রিটন সম্পন্ন একজন শিশুসাহিত্যিক বলে জানেন শিশুদের মনের দুনিয়ায় পৌঁছে যাবার রাস্তা। তাঁর যে কোনও লেখাতেই সূক্ষ্ম হাস্যরসের পাশাপাশি থাকে শিশুর উদ্ভটরসের জগৎ। সমকালীন ঘটনাবলি কিংবা ব্যক্তিকেও তিনি প্রাসঙ্গিক করে নেন বলে তাঁর কৌতুলহাস্যের মাত্রা আরও চড়ে ওঠে। শিশুদের প্রিয় অনুষঙ্গ পাখি ও প্রাণীর জগৎ। ছোটদের জন্য গদ্য রচনার সময়ে সে-কথা তাঁর মনে থাকে। ছড়াকার সত্তাও প্রায়শই উঁকিঝুঁকি মারে তাঁর গদ্যের চলতিপথে।
Lutfur Rahman Reton পুরনো ঢাকার ওয়ারী এলাকায় তার শৈশব অতিবাহিত হয়। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে আবুজর গিফারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন। তিনি ২০০১ খ্রিস্টাব্দে জাপানে বাংলাদেশের কালচারাল এটাশে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সাবেক সম্পাদক হিসেবে ছোটদের কাগজ (অধুনালুপ্ত); জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক ফার্স্ট সেক্রেটারি (২০০০-২০০১) ছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ: ছড়া: ধুত্তুরি (১৯৮২); ঢাকা আমার ঢাকা (১৯৮৪); উপস্থিত সুধীবৃন্ধ (১৯৮৪); হিজিবিজি (১৯৮৭); তোমার জন্য (১৯৮৯); ছড়া ও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৯); রাজাকারের ছড়া (১৯৯৯); শেয়ালের পাঠশালা (১৯৯২); রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মারকগ্রন্থ (২০০০); নেপথ্য কাহিনী (২০০১)। সম্মাননা ও স্বীকৃতি সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮২, অগ্রণী ব্যাংক শিশু ,সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮২, ১৯৯৬, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার ১৯৮৪, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ২০০৭