"মুমু"বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ইভান তুর্গেনেভ বিশ্বের অন্যতম মহান লেখক। জন্ম ১৮১৮ সালে রাশিয়ার ইউক্রাইন অঞ্চলের ওরিয়ােল শহরে। মা-বাবা উভয়ই ছিলেন জমিদার। সেন্ট পিটার্সবুর্গে স্কুলজীবন শেষ করে তিনি চলে যান জার্মানিতে। ১৮৪১ সালে স্নাতকোত্তর শিক্ষা অর্জন করেন বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। লেখাজোকা শুরু করেন আরাে পরে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে তুর্গেনেভ রাশিয়ান সিভিল সার্ভিসে যােগ দেন। কিন্তু ওই চাকরি বেশিদিন করেননি। একবার রাশিয়া থেকে জার্মানিতে জাহাজে চড়ে যাওয়ার সময় জাহাজে আগুন লেগে যায়। ওই বিপজ্জনক ঘটনার স্মৃতি লিখে রাখতে গিয়েই তিনি সাহিত্যকর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে ততই নিজের মধ্যে টের পান লেখনীশক্তির। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন সবকিছু ছেড়ে শুধু লেখার মধ্যেই মনােনিবেশ করবেন। ফলে ১৮৪৫ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরােপুরি সাহিত্যকর্মে মনােনিবেশ করেন। ইভান তুর্গেনেভ-এর মা ছিলেন নিষ্ঠুর জমিদার। তিনি ভূমিদাসদের ওপর নির্যাতন চালাতেন এবং সামাজিক পরিবর্তনের ছিলেন ঘাের বিরােধী। তুর্গেনেভ-এর শৈশব কেটেছে এই নিষ্ঠুর মায়ের অধীনে। প্রায় সময়ই মার খেয়েছেন স্বাভাবিক দুষ্টুমির জন্যও। তাই শৈশব কেটেছে তার ভয়ানক নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে। তুর্গেনেভ-এর বাবাও ছিলেন অর্থলােভী মানুষ। তাঁর বাবার তুলনায় মা দশ বছরের বড় ছিলেন। নিজের অনেক ধনসম্পদ থাকা সত্ত্বেও তুর্গেনেভ-এর মাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন শুধু ওই সম্পদের লােভে। কোনাে কোনাে সমালােচক মনে করেন, মুমু' গল্পে যে জমিদারনীর চরিত্র আঁকা হয়েছে সেটা তুর্গেনেভ-এর মায়েরই প্রতিচ্ছবি। এসব কারণে তুর্গেনেভ ছােটবেলা থেকেই ছিলেন মা ও বাবার ঘাের বিরােধী। বড় হওয়ার পর বিভিন্ন লেখার মধ্যে নানাভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের মা-বাবার লােলুপ ও নিষ্ঠুর চরিত্র। ভূমিহীন প্রথার প্রচণ্ড বিরােধিতার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও প্রথাবদ্ধ নিয়ম পরিবর্তনের সমর্থন লক্ষ করা যায় তার লেখার পরতে পরতে। এছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতা, বিপন্নতা এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে মনােবিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গল্প ও উপন্যাসে। বিশ্বখ্যাত লেখক তলস্তয়, পুশকিন, গােগল ও দস্তয়েভস্কির সমসাময়িক এই লেখক। তুর্গেনেভ-এর কয়েকটি বিখ্যাত উপন্যাস হল— রুদিন (১৮৫৬), হােম অব জেন্ট্রি (১৮৫৯), নাকানিউন (১৮৬০), ফাদার্স অ্যান্ড সন্স (১৮৬২), ফাস্ট লাভ (১৮৬৯) এবং দ্য ফ্যামিলি চার্জ (১৮৫৭)। এসব উপন্যাসের প্রধান বিষয়: মানুষের নানামুখী সম্পর্ক, স্বপ্নভঙ্গের হাহাকার এবং নারী-পুরুষের প্রেম। ১৮৬২ সালে ফাদার্স অ্যান্ড সন্স বইটি প্রকাশিত হলে শাসকের রােষানলে পড়ে নিজ-দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। দেশত্যাগ করে কিছুদিন জার্মানিতে কাটিয়ে চলে যান লন্ডনে। লন্ডনে মনের মতাে বন্ধু জুটল না বলে চলে যান প্যারিসে। সেখানেই প্রেমিকার সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৮৮৩ সালে এই মহান লেখক ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
ইভান সের্গেইয়েভিচ তুর্গ্যেনেভ (নভেম্বর ৯, ১৮১৮-সেপ্টেম্বর ৩, ১৮৮৩) একজন বিখ্যাত রুশ ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং ঔপন্যাসিক। ... ১৮৬২-তে প্রকাশিত তার কালজয়ী উপন্যাস ফাদার্স অ্যান্ড সানস উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়।