"মালাকাইটের ঝাঁপি" বইয়ের ভূমিকা থেকে নেওয়া: মালাকাইটের ঝাঁপির পটভূমি রাশিয়ার সর্বপশ্চিমে অবস্থিত উরাল গিরিশিরার ঢালুতে দুয়া আর আজোভ-পাহাড়ের পাদদেশের খনি-এলাকা। পাভেল পেত্রোভিচ বাঝােভ (১৮৭৯-১৯৫০) উরাল খনি-অঞ্চলের প্রাচীন লৌকিক কিংবদন্তি-অবলম্বনে রচনা করেছেন এই গল্পগুলাে। এই আখ্যানগুলাে নিয়ে অনেক ব্যালে ও ফিও তৈরি হয়েছে। উরালের পার্বত্য এলাকা নানারকম মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ। সােনা, তামা, পান্না, মালাকাইটের খোজে সতেরাে শতকের দিকে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুঃসাহসী ভাগ্যশিকারিরা এখানে আবাস গড়ে তােলে। আঠারাে শতকের দিকে রাজা, জমিদার ও অভিজাতশ্রেনি খনিগুলাের মালিকানা নিয়ে নেয়। বাঝােভের জন্মও এই রত্নসমৃদ্ধ খনি-এলাকায় ১৮৭৯ সালে। বাঝােভের পূর্বপুরুষ ছিল ভূমিদাস-মজুর। দাদা, দাদি ছিলেন তামা গালাইকর। ভূমিদাস-প্রথা অনেকটা দাসপ্রথার মতােই। এরা মনিবের জমিতে কৃষিকাজ করতে বাধ্য থাকে। জমি ছেড়ে অন্য কোথাও যাবার এদের অধিকার থাকে না এবং মনিব এদের ইচ্ছেমতাে অন্য কাজেও লাগাতে পারে। লেখকের দাদিকে তাঁর জন্মভূমি সিসের্তে থেকে জোর করে পােলেয়ার পুরনাে খনিতে পাঠানাে হয়েছিল, কারণ সেখানে মেয়ের সংখ্যা ছিল কম। তার ভাষায় : “ওদিকের পথটা ছিল মেয়েদের চোখের জলে ভেজা।” কারণ মেয়েরা তাদের মনিবের ইচ্ছেমতাে যে-কোনাে দাসকে বিয়ে করতে বাধ্য ছিল। লেখকের পিতার আমলে ভূমিদাস-প্রথা লােপ পায়। বাঝােভ তার স্বাধীনচেতা কারিগর পিতার সাথে এই বিশাল বৈচিত্র্যপূর্ণ পার্বত্য এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন; জেনেছেন সেখানকার প্রচলিত উপকথা, কিংবদন্তি, ইতিহাস। শ্রমজীবী মানুষেরাই মালাকাইটের ঝাঁপ্রি নায়ক-নায়িকা। তারা রাজা কিংবা রাজকন্যা নয়। বরং প্রতিনিয়ত রাজার প্রতিনিধি জমিদার, নায়েব ও গােমস্তার হাতে অত্যাচারিত। এই গল্পগুলাের চরিত্ররা বিভিন্ন বিচিত্র কাজের সাথে জড়িত। কেউ খনি থেকে তামা বা মালাকাইট উত্তোলন করত, কেউ সােনা-মেশানাে মাটি ধুয়ে আকর পৃথক করত, কেউ মালাকাইট পাথর কেটে গৃহসজ্জার সামগ্রী আঙুর, ফুল, পেয়ালা কিংবা অলংকার রাখার বাক্স তৈরি করত। এছাড়াও ছিল মধ্যস্বত্বভােগী কিংবা শহুরে ফুলবাবু— এইসব চরিত্র।