"আফ্রিকার রূপকথা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আফ্রিকা এক বিচিত্র মহাদেশ। এই কিছুদিন আগেও আফ্রিকা মহাদেশ সম্পর্কে আমরা বিশেষ কিছুই জানতাম না। আফ্রিকায় রয়েছে হাজার হাজার জাতি, উপজাতি। রয়েছে বিস্তৃত বনাঞ্চল। এখনও সেখানে আদিম মানুষের দেখা পাওয়া যায়। আফ্রিকা আজ জেগে উঠেছে। শােনা যাচ্ছে কালাে মানুষের গান। আমরাও অনুভব করতে পারি কালাে মানুষদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, আবেগ, রসবােধ, জীবনবােধ সম্পর্কে। যেখানে মানুষ আছে সেখানেই জীবন আছে। আর যেখানেই শােনা যাবে জীবনের স্পন্দন সেখানেই তৈরি হবে গল্প। হাজার হাজার বছর ধরে প্রবাহিত এইসব গল্প আফ্রিকার লােকসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। লােকসাহিত্যেই পাওয়া যায় মানুষ, জীবন ও জনপদকে। কিংবদন্তি কিবা উপাখ্যান, রূপক গল্প কিংবা প্রবচন, ধাধা কিংবা প্রবাদ—এ-সবই লােকসাহিত্যের অঙ্গীভূত বিষয়। লােকসাহিত্যেই ধারণ করা হয় রূপকথা, উপকথা কিবা কিংবদন্তি। আফ্রিকার বিস্তৃত লোেকজীবনের লােকগাথা থেকে নির্বাচন করা হয়েছে কিছু রূপকথা ও উপকথা। বিশেষ করে পশ্চিম ও পূর্ব আফ্রিকার দেশসমূহে বিপুল পরিমাণ লােকগল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। নাইজেরিয়া, কঙ্গো, ঘানা, মাসাইল্যান্ড, সহেল এলাকা, জুলুল্যান্ড, ইত্যাদি নানাদেশের নানা জাতির গল্পই আফ্রিকার লােকগাথা হিসেবে স্বীকৃত। আফ্রিকার লােকগাথার একটা ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গল্পের কাহিনীবিন্যাস খুব দ্রুত গতিসম্পন্ন। কথ্যভঙ্গি অত্যন্ত জোরালাে। ধাধাজাতীয় গল্পে শ্রোতাগােষ্ঠী থাকে। তারা গল্প-কথকের প্রশ্নের জবাব দেয়। আফ্রিকান জনগােষ্ঠী গল্প বলার ঢঙকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। গল্পের মধ্যে তারা অত্যন্ত সুরেলা, গীতল কখনও কখনও ছন্দোবদ্ধ বাক্য উচ্চারণ করে। এছাড়া তারা চরিত্রানুযায়ী কথ্য অভিনয় করে যা পৃথিবীর খুব কম দেশেই লক্ষণীয়। ছােট বাক্য, বিপরীতধর্মী ঘটনার সরল বর্ণনা, অধিক কথােপকথন আফ্রিকার রূপকথার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়া আফ্রিকার রূপকথায় পশুপাখিরা মানুষের মতাে সজীব ও উজ্জ্বল। কী, কোথায়, কেন, কীভাবে—এইসব প্রশ্ন নিয়েও একধরনের গল্প পাওয়া যায়। অতি কাল্পনিক, ফ্যানটাসি-নির্ভর এই গল্পে একটি জাতির স্বপ্ন ও কল্পনার পরিচয় পাওয়া যায়। হাস্য-কৌতুক, ছলনা, কপটতা, ভাড়ামি, দুষ্টতা, ভালােত্ব, কল্যাণকামী সকল শুভ-অশুভ, ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের ছাপ রয়েছে গল্পগুলােয়। আফ্রিকার রূপকথা সর্বতােভাবেই ভিন্ন জাতি ও ভিন্ন দেশের, ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন ভাবের ছবি তুলে ধরে আমাদের সামনে। এইসব গল্পের পটভূমি, পরিবেশ ও চরিত্রগুলাে অনেকক্ষেত্রেই আমাদের চেনা-জানা জগতের বাইরে। সেকারণেই গল্পগুলাের আলাদা স্বাদ ও বৈচিত্র্য আমাদের আনন্দ দেয়। গল্পগুলাে এখন ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর সবখানে। আফ্রিকার জনগণের প্রবহমান চিন্তাভাবনা সম্পর্কে এখন আমরা সকলেই আগ্রহী। কারণ কালাে মানুষেরা এখন জেগে উঠেছে।
জন্ম ৭ই এপ্রিল ১৯৬৪, লালবাগ, ঢাকা । পিতা প্ৰয়াত সাইফুর রহমান। মাতা প্ৰয়াত আনজিরা খাতুন। পিতৃব্য প্রয়াত কবি হাবীবুর রহমান, খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক । শিশুসাহিত্যের সকল শাখায় সমান স্বচ্ছন্দ। ২০০৬ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। সবচেয়ে কম বয়সে খামখেয়ালি ছড়াগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন শিশু একাডেমী আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। পরে এই পুরস্কার পেয়েছেন আরও পাঁচবার । এ ছাড়াও পেয়েছেন সিকানন্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৩), পদক্ষেপ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৫), ছােটদের পত্রিকা পুরস্কার (২০০৭), ছোটদের মেলা পুরস্কার (২০০৯/২০১০), জাতীয় ছড়া উৎসব। ২০১১ সম্মাননা, শামসুর রাহমান সাহিত্য পুরস্কার (২০১১) এবং ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল পুনর্মিলনী সম্মাননা। ২০১১ । কলকাতা থেকে অন্নদাশঙ্কর সাহিত্য পুরস্কার ২০১২। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। সবই শিশুসাহিত্য। দেশের খ্যাতিমান সকল প্রকাশনা সংস্থা থেকে এক বা একাধিক বই প্ৰকাশিত হয়েছে । দশ বছর সম্পাদক ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত কিশোর-তরুণদের উৎকর্ষধ্যমী মাসিক আসন্না-র । অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার কিশোরদের পাতা সম্পাদনা করেছেন। পাঁচ বছর । বর্তমানে চ্যানেল আই-এর জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে কর্মরত। সাপ্তাহিক-এর প্রকাশকও তিনি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির ফেলো, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপনা-সদস্য। প্রিয় শখ পুরোনো বই ও চিত্ৰকলা সংগ্ৰহ, বইপড়া, দাবাখেলা, রবীন্দ্রসংগীত শোনা ।