"আঁধার রাতের মুসাফির" বইয়ের পিছনের লেখা: আর মাত্র ছ‘ক্রোশ। গভীর আগ্রহে পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে রানী তাকিয়ে ছিলেন আলহামরার মিনার চূড়ায়। ছাউনী ফেললেন ফার্ডিনেন্ড। চূড়ান্ত আঘাত হানার প্রস্তুতি সম্পন্ন প্রায়। চারদিকে বিছিয়ে দিয়েছেন ষড়যন্ত্রের কুটিল জাল! সে জালের রশি ধরে। এবার শুধু টানার পালা। এমনি সময়ে সহসা স্পেনের উপকূলে উদয় হলাে তুর্কী রণতরী। প্রথম অভিযানেই তারা উদ্ধার করলাে বিপ্লবী নেতা হামিদ বিন জোহরাকে। জাহাজকে বিদায় জানিয়ে উপকূলে নেমে এলেন কাপ্তান সালমান। কিন্তু কেন? স্পেনের মাটিতে কী তার কাজ? যে জাতির সুলতান অথর্ব আর উজির গাদ্দার তাদের পতন কি। ঠেকাতে পারবেন তিনি? পারবেন কি হামিদ বিন জোহরার হত্যা প্রচেষ্টা। রুখতে? কেন তিনি একের পর এক অবিশ্বাস্য বিপজ্জক অভিযানে মেতে উঠছেন? কীসের স্বার্থে? কেন? গ্রানাডা কন্যা আতেকার পেছনে। ছুটছে দুর্বত্ত ওতবা ও ওমর। রক্তের নেশায় পাগল হয়ে উঠেছে এরা। হন্যে হয়ে খুঁজছে তার প্রেমিক পুরুষ সাঈদকে। এদের কি বাঁচাতে পারবেন সালমান? কী হবে অপহৃত মনসুরের পরিণতি? কার জন্য মালা গাঁথছে বদরিয়া? কেন ভীনদেশী এক পুরুষের জন্য প্রাণ কাঁদে তার?
কথাসাহিত্যিক নাট্যকার ও অনুবাদক আবদুল হক (১৯১৮-১৯৯৭) গত শতাব্দীর বিশের দশকের বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের উত্তরসূরি; প্রাবন্ধিক হিসেবেই সমধিক পরিচিত। স্মৃতিকথা ও দিনলিপির নির্বাচিত অংশ এবং ছড়ানাে ছিটানাে ব্যক্তিগত রচনা মিলিয়ে সম্পন্ন হয়ে উঠেছে তাঁর এই আত্মজীবনী। এতে সংগ্রামশীল সাহিত্য-নিমগ্ন একজন মননশীল ব্যক্তিমানুষকেই খুঁজে পাওয়া যায়! এখানেও তিনি বিজ্ঞানমনস্ক ও মুক্তিবুদ্ধিরই মানুষ। রয়েছে প্রাবন্ধিকসুলভ তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, গভীর অন্তর্দৃষ্টি আর ইতিহাস চেতনার পরিচয়। আপাত অর্থে নিজের কথা বললেও তা কেবল ব্যক্তিবিশেষের আত্মকথন না হয়ে হয়ে উঠেছে। বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজের মানসবিবর্তনের ইতিহাস। আত্মজীবনীমূলক রচনা মহৎ হয়ে ওঠে আত্মস্বীকারােক্তিতেও, কারণ এর লেখক নিজের একজন মূল্যায়নকারীও বটেন! এই আত্মজীবনীও এর ব্যতিক্রম নয়। যে-সব মানুষের সম্পর্কে এখানে মন্তব্য রয়েছে তাতেও রয়েছে অনুকম্পায়ী হৃদয়ের মােহমুক্ত বিচার! ঘটনার নিকটদূরত্বে থেকে লেখা হলেও এই রচনা হয়ে উঠেছে আশ্চর্য নির্মোহতার নিদর্শন!