জন্ম ১৯২৭ সালের ১ ফেব্রয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার রূপসী গ্রামে। তাঁর পিতার নাম কাজী আলীম উদ্দিন আহমদ এবং দাদার নাম কাজী গোলাম হোসেন। রূপসী বোর্ড প্রাইমারি স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে তিনি বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৫ সালে তিনি হুগলী ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই.এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান লাভ করেন। এর পর ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান এবং ১৯৪৯ সালে বাংলা বিভাগ থেকে এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে ‘দি ফোনোলজি অব দি ভার্বাল পিস ইন কলোকুয়াল বেঙ্গলি’ অভিসন্দর্ভ রচনা করে ভাষাতত্ত্বে পি-এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন প্রফেসর মিসেস ই.এম. হুইটলি। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে ডক্টর সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের পর তিনি দ্বিতীয় বাঙালি, যিনি পি-এইচ.ডি. লাভ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষা ছুটি নিয়ে তিনি উচ্চতর গবেষণার জন্য লন্ডন যাত্রা করেন এবং ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে পি-এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালের জুন মাসে লন্ডন থেকে ফিরে তিনি বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে কর্মরত থাকেন। ১৯৬২ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন এবং জানুয়ারি ১৯৬৪ পর্যন্ত ঐ পদে কর্মরত থাকেন। ১৯৬৪-৬৫ সালে তিনি কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডে উন্নয়ন অফিসার পদে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পুনরায় রিডার পদে বাংলা বিভাগে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমীর পরিচালক নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৯ পর্যন্ত ঐ পদে কর্মরত থাকেন। এরপর বাংলা বিভাগে ফিরে এসে রিডার পদে তিনি ১৯৭৮ পর্যন্ত কাজ করে ১ অক্টোবর ১৯৭৮ তারিখে বাংলা বিভাগে তিনি প্রফেসর নিযুক্ত হন। ১২.১২.১৯৭৮ তারিখে তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং ১১.১২.১৯৮১ পর্যন্ত ঐ দায়িত্ব পালন করেন। প্রফেসর হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেন ৩০.৬.১৯৮৭ তারিখে। ১.৭.১৯৮৭ তারিখে তিনি প্রফেসর পদে পুনর্নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পাঁচ বছর পুনর্নিয়োগের পর ১.৭.১৯৯২ থেকে তিনি বিভাগে সংখ্যাতিরিক্ত প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেষবারের মতো অবসর নেন। ঐ বছরই অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে তিনি ঢাকায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদের বহু গ্রন্থের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা কমপক্ষে ২৫টি- (১) সাহিত্য সম্ভার, নওরোজ কিতাবিস্তান, ঢাকা; (২) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, ১ম খণ্ড, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা ১৯৬৮; (৩) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ২য় খণ্ড, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা ১৯৬৮; (৪) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, ৩য় খণ্ড, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা ১৯৬৮; (৫) মানব মর্যাদা, সিরাজউদ্দিন হোসেন সহযোগে সম্পাদনা, ফ্রাঙ্কলিন পাবলিশার্স ঢাকা ১৯৬৮; (৬) সাহিত্য শিল্প, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা ১৯৬৮; (৭) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, চতুর্থ খণ্ড, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা ১৯৬৯; (৮) মানব জীবন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, ১৯৮০; (৯) সূফীবাদের গোড়ার কথা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, ১৯৮০; (১০) জীবন সৌন্দর্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, ১৯৮১; (১১) সেকালের সাহিত্য, ঢাকা ১৯৬৯; (১২) সংস্কৃতি ও আদর্শ, ঢাকা ১৯৭৩; (১৩) ভাষাতত্ত্ব, ঢাকা ১৯৭১; (১৪) দি ভার্বাল স্ট্রাকচার ইন কলোকুয়াল বেঙ্গলি, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৫; (১৫) বর্ণমালা, ঢাকা, ১৯৭৪; (১৬) লোকসাহিত্যে ধাঁধা ও প্রবাদ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৬৮; (১৭) মানব মর্যাদা, ঢাকা, ১৯৫৮; (১৮) সূফীবাদ ও আমাদের সমাজ, ঢাকা, ১৯৬৯; (১৯) প্রতিবর্ণায়ন নির্দেশিকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, ১৯৮২; (২০) প্রভাত (কবিতা), ঢাকা, ১৯৭৫; (২১) সুখের লাগিয়া, ব্যক্তিগত প্রবন্ধ, ঢাকা ১৯৮৯; (২২) বাংলাদেশে ইসলামের আবির্ভাব, ঢাকা ১৯৯০; (২৩) আমি তো দিয়েছি তোমাকে কাউসার, হযরত মুহম্মদ (স)-এর জীবনের নানা দিক, ঢাকা, ১৯৯১; (২৪) নাস্তিকতা ও আস্তিকতা, ঢাকা, ১৯৯১; (২৫) একালের সাহিত্য, ঢাকা, ১৯৬৯। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ তালিকা থেকে তাঁর সাহিত্য চর্চার ও গবেষণাকর্মের পরিধি সম্পর্কে ধারণা করা যাবে। তিনি নিরলস সাহিত্যকর্মী হিসেবে সারাজীবন সাধনা-নিমগ্ন। শুধু সাহিত্য নয়, তিনি একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে সুপরিচিত ও সমাদৃত। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ অবস্থায় ২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর এই মনীষী ইন্তেকাল করেন। সোনারগাওয়ের রূপসীতে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।