ভূমিকা এ এক অসাধারণ জীবনের গল্প। গল্পটা নরেন্দ্র মোদির। ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমর্থিত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। ২০১৪ সালের নির্বাচন অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। মার্চ ১৯৭৭-এর ঐ ঐতিহাসিক নির্বাচনের পর এটাই ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন। ১৯৭৭ ঐ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধি পরজয়বরণ করেন। তবে সেই নির্বাচনে ৬০ ভাগ ভারতীয় দেখেনি কারণ তাদের বয়স পঁয়ত্রিশের কম। এবারের নির্বাচন তরুণদের নির্বাচন। তারাই ঠিক করবে দেশের ভবিষ্যত। যাই হোক, মোদি একইসাথে জঠিল এবং সরল চরিত্রের অধিকারী। বইয়ের কাজ শুরু করার প্রথমদিকে ব্যাপারটা আমাকে বেশ ঝামেলাতেই ফেলেছিল। কিন্তু তার সাথে থাকতে থাকতে বুঝতে পারলাম একইসাথে তিনি দৃঢ়, কঠোর ও শান্ত স্বভাবের মানুষ। তার সাথে আমি অনেকগুলো নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিলাম। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছি, ব্যস্ত মোদির প্রতিদিনের জীবন দেখেছি। ধীরে ধীরে নরেন্দ্র মোদির ভেতরের ছবিটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
সেই ছবিটাই এই বইয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমি। সাধারণ ইন্টারভিউ এ মত ব্যাপারগুলোতে আগ্রহ নেই মোদির। মাঝে মাঝে যা দিয়েছেন তার সবগুলোই সীমিত কিন্তু আমাদের কথাবার্তা সবসময়ই ছিল দিল-খোলা টাইপের। এর আগে বোধহয় কোনো সাংবাদিক বা লেখকের এমন সুযোগ হয়নি। কথা বলার সময় স্বাভাবিকভাবেই অনেক স্পর্শকাতর ব্যাপার উঠে এসেছে। তার প্রথমজীবন,ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন থেকে শুরু করে ২০০২ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, কোনোকিছুই বাদ যায়নি বোধহয়। কোনো ধরনের প্রশ্ন বা আলোচনাতেই বাধা ছিল না। কোনোরকম রাখ-ঢাক ছাড়াই কথা বলেছেন মোদি। সব পরিস্থিতিতে কেন কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সবকিছুই বলেছেন খোলাখুলি।
এই বই পড়ার আগে পাঠকের মনে দুটি প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এক, বৃটিশ একজন লেখক ভারতকে, ভারতের জটিলতাগুলোকে কতটা বুঝতে পারবে? আর দুই, বইয়ে মোদির খারাপ দিকগুলো বাদ দিয়ে শুধু ভালো দিকগুলোই ফলাও করে লেখা হবে কিনা।
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই: কোন কোনো সময় সত্যিকারের সমস্যাটা বাইরের একজন মানুষ সহজেই বুঝতে পারে কিন্তু ভেতরের মানুষরা অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও বুঝতে পারে না আর বিভিন্ন কারণে লম্বা একটা সময় ভারতে থেকেছি আমি তাই ভারতের আচার ব্যবহার, সমাজ, সাংস্কৃতির সাথে বেশ ভালোই পরিচয় হয়েছে আমার। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই- এই বই শুধুমাত্র কয়েক সপ্তহের ইন্টারভিউয়ের ফল নয়, মোদির উপর পুরো একবছরের রিসার্চের ফল। মোদি সম্পর্কে জানার জন্য অনেকের সাথে কথা বলেছি আমি, রাজনীতির মানুষ, রাজনীতির বাইরের মানুষ, মোদির বন্ধু শত্রু, কাছের মানুষ দূরের মানুষ। ফলে মোদির জীবন বেশ ভালোরকম পরিষ্কার হয়ে ফুটে আমার সামনে। আর স্পষ্টতই পক্ষপাতদুষ্ট হলে কোনো বায়োগ্রাফিই সফল বলা যায় না। পরপর দুটো সফল বায়োগ্রাফি লেখার পর, আমার উপরে এব্যাপারে যথেষ্ট চাপ ছিল। আর মোদি ২০১৪ নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়াতে চাপটা আরো বেড়ে গেছে। এজন্য আমার দেওয়া তথ্যগুলোর সাথে তথ্যের উৎসও যোগ করেছিলাম যাতে কোনো সন্দেহ না থাকে। পাঠক চাইলে উৎসগুলোকেও চোখ বুলিয়ে নিতে পারবেন একই কারণে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদি কতটা সফল সেই বিষয়ে সবাই খু্বই আগ্রহি হয়ে পড়েছে। প্রেস ও মিডিয়াতে মোদির পক্ষে যত কথা শোনা গেছে তারচেয়ে বেশি শোনা গেছে বিপক্ষে।
এই বইয়ে আমি এসব পক্ষপাতিত্বের উপরে ওঠার চেষ্টা করেছি। মোদির সত্যি গল্পটা বলার চেষ্টা করেছি। কারণ জীবনের সত্যি গল্পটা তার প্রাপ্য হলে দাঁড়িয়েছে, সেটা ভালোই হোক আর খারাপই হোক। আশা করছি এই বই সেই স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছাতে পারবে।