"সৃজনশীল গাণিতিক রসায়ন-২য় পত্র (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি)"বইটির ভূমিকা: জাতীয় আদর্শ ও লক্ষ্যের নিরিখে শিক্ষার্থীদের সমকালিন চাহিদা মেটানাে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সাথে অভিযােজন এবং বিশ্বায়নের সাথে সম্পৃক্ত করে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোের্ড (এন.সি.টি.বি) ২০১৩ সালে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল বিষয়ের জন্য সময়ােপযােগী সৃজনশীল শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করেছে। সৃজনশীল শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী ভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে এন.সি.টি.বি-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় ত্রিশটি লেখক গ্রুপ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির রসায়ন-১ম ও ২য় পত্র বইয়ের পান্ডুলিপি বাের্ডের অনুমােদনের জন্য জমা দেয়। বাের্ডের মনােনীত তিনজন বিশেষজ্ঞ মূল্যায়নকারীর রিপাের্টের ভিত্তিতে ১ম ও ২য় পত্রের ৩০টি পান্ডুলিপির মধ্যে ১ম পত্রের ১০টি এবং ২য় পত্রের ১১টি বই অনুমােদন পায়। পাঠ্যপুস্তক বোের্ড কর্তৃক অনুমােদিত বই এর তালিকায় আমাদের লেখা ১ম পত্র ও ২য় পত্র বই দুটি যথাক্রমে ১ম ও ৩য় স্থান লাভ করে। আমাদের বইসহ অন্যান্য অনুমােদিত বইগুলাে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে অনুমােদিত প্রত্যেকটি বইএ রসায়ন বিষয়ের গাণিতিক দিকটি ভীষণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। যা সৃজনশীল চিন্তা বিকাশের পরিপন্থি। পাঠ্যক্রমে প্রচুর তত্ত্বীয় ভিত্তিক সমীকরণ থাকা সত্বেও উভয় পত্রের আয়তনের সীমাবদ্ধতার (মাত্র ২৫০ পৃষ্ঠা) কারণে তত্ত্বীয় ভিত্তিক গাণিতিক সমীকরণগুলাে তেমন আলােচিত হয়নি। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা একজন শিক্ষার্থীর জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া যতটা কঠিন হবে তারচেয়ে বেশি কঠিন হবে অংক ভিত্তিক প্রকৌশল শিক্ষায় নিজেকে মানিয়ে নেয়া। এছাড়া সকলেই স্বীকার করবেন প্রতিটি সজনশীল চিন্তা ধারার সংগে গাণিতিক সমস্যা ও এগুলাের সঠিক সমাধান সরাসরি জড়িত। এর স্বপক্ষে একটি উদাহরণ এখানে উপস্থান করা যেতে পারে, পাটিগণিতের সকল অংকের সমাধান যােগ, বিয়ােগ, গুণ অথবা ভাগ এই চারটির মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু এরপরও আমরা অনেক অংক সমাধান করতে পারি না। কেন? কারণ সৃজনশীলতার অভাব।যে। শিক্ষার্থীর সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা যত বেশি সে তত সহজে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে। মানুষের সৃজনশীল ক্ষমতা অনুশীলনের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত যা অনেকটা দাবা খেলার মত। যত বেশি অনুশীলন করবে তত ভাল ফল পাবে। এ সকল বিষয়াদি অনুধাবন এবং প্রকৌশল শিক্ষায় ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ২০০০ সালে প্রথম “উচ্চ মাধ্যমিক গাণিতিক রসায়ন” বইটি রচনা করি। বইটি প্রকাশের সাথে সাথেই সে সময়ই উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বর্তমানে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু ড. মােঃ মনিমুল হক রচিত “উচ্চ মাধ্যমিক গাণিতিক রসায়ন” পড়েনি এমন একজন ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যায় না। নব প্রবর্তিত সিলেবাসে রসায়ন বিষয়ে গাণিতিক দিক, ভীষণভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যে অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করণের লক্ষ্যে বর্তমানে ২০১৩ সালে প্রণীত সৃজনশীল সিলেবাসের আলােকে আমার পূর্বের উচ্চ মাধ্যমিক গাণিতিক রসায়ন বইটির ধারাবাহিকতায় গাণিতিক রসায়ন ১ম ও গাণিতিক রসায়ন ২য় পত্র বইটি রচনায় উদ্যোগী হই। নব প্রণীত এই বইটিতে ২০১৩ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বাের্ড কর্তৃক প্রণীত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির রসায়ন ১ম ও ২য় পত্রের সিলেবাসে যে সকল নতুন বিষয় সংযােজিত হয়েছে, সেগুলােসহ পরমাণুর গঠন, দ্রাব্যতা ও দ্রাব্যতা গুনাঙ্ক এবং জৈব রসায়ন ভিত্তিক অনেক গাণিতিক সমস্যা আলােচনা ও সমাধান করা হয়েছে। আমার । দৃঢ় বিশ্বাস প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলােতে ভর্তিসহ প্রকৌশল শিক্ষার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে এই বই যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। গাণিতিক রসায়ন” বইটি নতুন আঙ্গিকে প্রণয়নের প্রয়ােজনীয়তা উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রী আমাকে পরামর্শ দিয়েছে, আমি তাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। বইটির পাণ্ডুলিপি রচনাকালে আমার প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দ, বিশেষ করে অধ্যাপক ডঃ মােঃ আবু ইউসুফ, প্রধান, রসায়ন বিভাগ, কুয়েট; ডঃ মােঃ মােস্তফা আকবর, অধ্যাপক, সিএসই বিভাগ, বুয়েট; প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান সােহাগ, সত্ত্বাধিকারী, রকমারী ডট কম; মােঃ মাজহারুল হক, সহযােগী অধ্যাপক, সিটি কলেজ, ঢাকা; মােঃ শরিফুল ইসলাম ভূইয়া, প্রভাষক, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ; জনাব মােঃ জাকির হােসেন সানি, প্রভাষক, প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন কলেজ, মুন্সিগঞ্জ প্রমুখ নানাভাবে পরামর্শ দিয়েছেন। এদের সকলের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও সহযােগিতা পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
Title
সৃজনশীল গাণিতিক রসায়ন-২য় পত্র (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি)