Syed Waliullah (তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর এলাকায়, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট) তাঁর পিতা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা; মা নাসিম আরা খাতুনও সমতুল্য উচ্চশিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার থেকে এসেছিলেন, সম্ভবত অধিক বনেদি বংশের নারী ছিলেন তিনি। ওয়ালীউল্লাহর আট বছর বয়সের সময় তার মাতৃবিয়োগ ঘটে। দুই বছর পর তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। বিমাতা এবং বৈমাত্রেয় দুই ভাই ও তিন বোনের সঙ্গে ওয়ালীউল্লাহর সম্পর্ক কখনোই অবনতি হয় নি। তার তেইশ বছর বয়সকালে কোলকাতায় চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যান। তার পিতৃমাতৃবংশ অনেক শিক্ষিত ছিলেন। বাবা এম এ পাশ করে সরাসরি ডেপুটি মেজিস্ট্রেট চাকুরিতে ঢুকে যান; মাতামহ ছিলেন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে পাশ করা আইনের স্নাতক; বড়ো মামা এমএবিএল পাশ করে কর্মজীবনে কৃতি হয়ে খানবাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন এবং স্ত্রী ওয়ালীউল্লাহর বড়ো মামী ছিলেন নওয়াব আবদুল লতিফ পরিবারের মেয়ে, উর্দু ভাষার লেখিকা ও রবীন্দ্রনাথের গল্প নাটকের উর্দু অনুবাদক। ১৯৩৯ সালে তিনি কুড়িগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক, এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তার আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিলো ডিস্টিঙ্কশনসহ বিএ এবং অর্থনীতি নিয়ে এমএ ক্লাশে ভর্তি হয়েও শেষে পরিত্যাগ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ওয়ালীউল্লাহ ঢাকায় এসে প্রথমে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সহকারী বার্তা-সম্পাদক ও পরে করাচি কেন্দ্রের বার্তা-সম্পাদক (১৯৫০-৫১) হন। ১৯৫১-৬০ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষে নয়াদিল্লি, সিডনি, জাকার্তা ও লন্ডনে বিভিন্ন উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসে পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ১৯৬৭-৭১ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ছিলেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ দুটি গল্পগ্রন্থ নয়নচারা (১৯৫১), দুই তীর ও অন্যান্য গল্প এবং তিনটি নাটক বহিপীর (১৯৬০), তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬৪) ও সুড়ঙ্গ (১৯৬৪) রচনা করেছেন। ছোটগল্প ও নাটকেও তিনি সমাজের কুসংস্কার, ধর্মীয় ভন্ডামি, মানসিক ও চারিত্রিক স্খলন ইত্যাদিকে প্রতিভাসিত করেছেন। তিনি দেশ-বিদেশের নানা সাহিত্য পুরস্কার এবং বাংলাদেশ সরকারের ‘একুশে পদক’ (মরণোত্তর, ১৯৮৩) লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর প্যারিসে তাঁর মৃত্যু হয় এবং প্যারিসের উপকণ্ঠে মদোঁ-স্যুর বেল্ভু-তে তিনি সমাহিত হন।
ছাইচাপা পড়া কয়লার কমলা আলো হয়ত দেখা যায় না কিন্তু উত্তাপটা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কিছুকে লুকিয়ে বেশিক্ষণ রাখা যায় না, মনের ভেতর অনুতাপের উত্তাপ জাগে। কিন্তু যদি বিষয়টা হয় ক্ষমতার? যদি বিষয়টা হয় এক অন্ধ বিশ্বাসের...? বিষয়টা যদি হয় মজিদের! কে এই মজিদ? চলুন এক নজরে জেনে নেয়া যাক।
#উপন্যাসের_ভেতরের_গল্প
দেশটা থেকে ছড়িয়ে পড়ার এক অদ্ভুত উন্মত্ততা পেয়ে বসেছে যেন। রাতজাগা ঝিমধরা ট্রেনটা হঠাৎই জেগে ওঠে। যাত্রীরা দেখে তাদের ছুটছে... যেন এই ট্রেনের মাঝেই ভাগ্য লুকানো তাদের, খুঁজে নিতে কার্পণ্য করবে না। আর করলেই কি হবে? হা শুন্য চোখে রাজ্যের চিন্তা। জঠরে দানাপানি নেই। "শষ্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি" এমন এক অভাবে দেশ থেকে ছুটেছে মজিদ।
মজিদ! শীর্ন দেহে কগাছি দাঁড়ি মুখে, শরীরের চেয়ে চোখের তীব্রতা বেশি। সুচতুর, বাস্তববাদী। মহব্বতনগরে তার নাটকীয় প্রবেশ গ্রামেরর সাধারন পরিবেশে জুরে দিল এক ব্যস্ততা! ধর্ম ব্যাবসা! মজিদ ভাঙা একটা কবরকে ঘোষণা দিল মোদাচ্ছের পীরের মাজার। জমায়েত যেন ভুত দেখার মত বিস্ময়ে ফাটছে। কবরটা হয়ে গেল রুপালী ঝালরাবৃত মাজার, গ্রামের লোকজনের বিশ্বাস আর আমাদের মজিদের শক্তি.... বছর ঘুরে ঘুরে মজিদের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকল। ঝড়ের মুখে উড়ে চলা চারাগাছটা এখানে শেকড় গেড়ে বসল।
রহিমা! বিধবা মহিলা। মজিদের সাথে দ্বিতীয়বার বিয়ের পরে সে জড়িয়ে গেল মাজার আর মজিদের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রামের লোকের কাছে। শক্তিমত্তা মেয়ে মানুষটা নেহাত ঠান্ডা মেজাজের... সে মাজারকে ভয় পায়, ভয় পায় খোদাকে, ভয় পায় মজিদকে।
রহিমার কাছে আর্জি জানাতে আসা লোকদের একজন হলো হাসুনির মা। সেও বিধবা। তাহের কাদেরের বোন। বাড়িতে বাড়িতে ধান ভাড়ানির কাজ করে খায়। বাড়িতে বুড়ো মা বাবার ঝগড়া। আর মায়ের তাদের জন্ম নিয়ে কুৎসা রটানো সব মিলিয়ে সে ভরসা পায় না।
আউয়ালপুরের পীর সাহেবের প্রভাবে মজিদের প্রতিপত্তি যেন একটু মলিন হয়ে যাচ্ছে। পীর সাহেব আবার বড় বড় ডিঙা ছাড়ছে, সে সুর্যকে ধরে রাখতে পারে। মজিদ তাকে ছেড়ে দিবে? এতোটা দুর্বল তো মজিদ না...
খালেক ব্যাপারীর প্রথম পক্ষের বউ আমেনা বিবির সন্তানের বড় খায়েশ। বড় আবদার করে সে খালেক ব্যাপারীরে মনের কথাটা বলল। এদিকে আউয়ালপুরের পীরের কাছে সে যেতে পারে না। জুতা মেরে গরু দান করার মতো ব্যাপার সে করতে পারে না... প্রথমবার করা আবদার ফেলতেও পারে না খালেক ব্যাপারী। দ্বিতীয় পক্ষের বিবি তানু বিবির ভাই ধলা মিয়াকে দিয়ে সে পানিপড়া আনাবে ঠিক করে কিন্তু.......! কি হয় তার? মজিদ কিভাবে জেনে যায় আমেনা বিবির আর্জি! কি করে সে? সে তো চুপ থাকার মানুষ না। আর যাই হোক দ্বিচারিণী মেয়ে লোকের উপহাস সহ্য করবে সমাজ ততো দুর্বল না।
ওদিকে নব্য শিক্ষিত আক্কাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা তোলে । কিন্মু সচেতন মানুষসমাজ যে ধর্ম ব্যবসার বাধা।
আবার মজিদের খুব ইচ্ছে হয় নিজের সন্তানের। একদিন সে তার মেয়ের বয়েসী জমিলাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। শান্ত চুপচাপ মেয়েটাকে মজিদের মনে ধরে। কিন্তু এ যে সাক্ষাৎ কালকেউটে। মুসলমানের মেয়ের হাসি? নামাজ পড়ে না? ক্রমেই তার মজিদের ওপর ঘৃণা জন্মাতে থাকে। তারপর?
এতগুলো চরিত্রের ভীরে সব চরিত্রের কলকাঠি নাড়ছে একজন। মজিদ! মজিদ লোকটা নিঃসন্দেহে খুব বড় মাপের অস্তিত্ববাদী। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় কি?
#মন্তব্য__ সময়টা তখনকার যখন সাহিত্যজগতে ভারত বিভক্তি আর অরাজকতা নিয়ে চর্চা হচ্ছিল। কিন্তু ওয়ালীউল্লাহ হেঁটেছেন একেবারে ভিন্ন পথে। সামাজিক উপন্যাস হিসেবে এটা একটা সার্থক উপন্যাস। সার্থক বলার পেছনে আমার যুক্তি
★ প্রচুর চরিত্রের সমাবেশ কিন্তু কোনো চরিত্র অন্যটার স্বাতন্ত্রতাতে বাধা দেয়নি ★ গল্পের প্লটটা খুবই স্ট্রং ★ ভাষাগত সৌকর্য লক্ষ্য করার মত ★ অস্তিত্ববাদীরাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে, এই ভাবধারাটা অতীব বাস্তবজ্ঞান ভিত্তিক ★ গল্পের প্রবাহ বেশ স্মুথ, তবে এটা পাঠকের মনে করুণরস, আনন্দে অনুভুতি জাগাতে সক্ষম ★ বর্ণনানির্ভর হলেও অতিবর্ণনা দেখা যায় নি।