বইটির প্রথম ফ্লাপের কিছু কথাঃ শাফিকুর রাহীর কিশােরকবিতা মূলত দেশপ্রেমের কাব্যিক কথামালা। তাঁর কিশােরকবিতা সমগ্র-১, কিশােরকবিতা সমগ্র-২ সহ প্রায় ২০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনী সংস্থাসমূহ থেকে রাহীর ভাবনা ও ছন্দশৈলী প্রশংসাৰ্হ। তাঁর কবিতায় চিত্রকল্প, উপমা ও শব্দচয়নে এক নিরন্তর প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। যেমনআজকে ধুলােয় লুটোপুটি খায় সক্রেটিসের বাণী কালমার্কসের সাম্যবাদের দর্শন কেউ মানি? লিংকন, মাও, লেনিন এবং মুজিবের মতাে বীর পৃথিবীতে কবে জন্মাবে বলে উর্ধ্বে উচিয়ে শির। শুধু শিশু-কিশাের নয়, বড়রাও তার কবিতা পড়ে ছেলেবেলার স্বপ্নরঙিন স্মৃতিতে আর সবুজ-সুন্দর প্রকৃতিতে হারিয়ে যাবেন। এই বইয়ের কবিতাগুলাে পূর্বে প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে বাছাইকৃত। এই কবির কবিতার মূল সুরই হচ্ছে সুন্দরের আরাধনা। দেশ, সমাজ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, প্রকৃতি এবং মানবতাই সেখানে মুখ্য। তাঁর কবিতা অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আগামী প্রজন্মকে প্রতিবাদে সােচ্চার হতে প্রেরণা যােগাবে। ছন্দবদ্ধ ও সাবলীল ভাষায় মন্ত্রমুগ্ধ শব্দচয়নে রচিত এই কবিতাগ্রন্থটি পাঠ করলে আমাদের আগামী প্রজন্ম খুব সহজেই জানতে পারবে বাঙালি জাতির হাজার বছরের গর্বিত সব অর্জন সত্য-সঠিক ইতিহাস। কিভাবে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মাটি ও মানুষকে ভালােবেসে আপন জীবন বিলিয়ে দেয় ত্রিশ লক্ষ প্রাণ স্বাধীনতার দৃঢ় প্রত্যয়ে, মুক্তির অপ্রতিরােধ্য সংগ্রামে। বই পাঠের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে প্রতিটি শিশু-কিশাের বেড়ে উঠবে আলােকিত আগামী বিনির্মাণে- এটা আমাদের বিশ্বাস।
Safiqur Rahi তারুণ্যের প্রতীক কবি শাফিকুর রাহী জন্মভূমির কাদামাটির কোমল কোল ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন রাজধানী ঢাকায়। বাংলার অজ অবহেলিত শস্যময় শ্যামল ভূমিতে সৈয়দ বংশের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১ জুন ১৯৬১ সালে ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা উপজেলার গজারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা : মো. মোবারক আলী, সাদামাটা এক ভূমিপূত্র, মাতা : কুলসুমন্নেসা, বাংলার চিরায়ত এক স্বপ্নহীনা মুখ। তিনি নয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। শিক্ষা : আজো অধ্যয়নরত। তাঁর পৈতৃক নিবাস: ফেনী চেলার দাগনভূঁঞা উপজেলাধীন ৩নং পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত গজারিয়া গ্রাম। দাদা-মিয়া খলিলুর রহমান, দাদী-জুলেখা বেগম। নানা-ভুলু মিয়া, নানী-উলফতুন্নেসা, শাপুয়া গ্রামের অধিবাসী। এই স্বভাবকবি শাফিকুর রাহী শেরপুর জেলার শ্রীবরর্দী উপজেলাধীন ভায়াডাঙা গ্রামের অধিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: মমতাজ উদ্দিন এর পঞ্চম সন্তান মনোয়ারা বেগম কোয়েলির সাথে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হন। কবির প্রথম পুত্রসন্তান মারা যায় বিনাচিকিৎসায়, একমাত্র কন্যা সৈয়দা শারফিন জাহান মনন ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। শাফিকুর রাহী সত্তর দশকের শেষের দিকে লেখালেখি শুরু করলেও মধ্য আশিতে লেখক হিসেবে কাগজে কলমে তাঁর আত্মপ্রকাশ। সময়ের শক্তিমান কবি শাফিকুর রাহী বিরহী, প্রেমিক। তাঁর কবিতায় স্বদেশ স্বভূমি আসে বহুধা অভিধায়। তাঁর প্রেম নিখাদ শৈল্পিক কারুকাজে বাধা পড়ে শব্দের ফ্রেমে। এখন তিনি স্বদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল নিপুণ মমতায় ধারণ করেন মননের ঝুলন্ত অলিন্দে, আর এভাবেই হয়ে যান নির্ভেজাল ক্ষুদিরাম। রাহী এই সময়ের কাব্য অরণ্যে মন্ত্রমুগ্ধ শাণিত সুরের বেদনা বিদ্রোহী বিহগ। তাঁর কবিতা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে সহজেই। লোক-রোমান্টিক এই কবির শব্দ উপমা, স্টাইল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ব্যত্যয়ের জন্য রাহীকে চেনা যায়, চেনা যায় তাঁর কবিতাকে। তুমুল স্বপ্নবাদী এবং নিখাদ বাঙালি দেশজ কাব্যশিল্পী শাফিকুর রাহী লিখেছেন দীর্ঘসময় ধরে, আপন বৃত্তের যে স্বকীয় অবস্থান নির্মাণ করেছেন তা সময়কে উত্তীর্ণ করে তাঁকে নিয়ে গিয়েছে সুখ্যাতির শিখরে। প্রেম দ্রোহ মানবতার কবি হিসেবেও অর্জন করেছেন খ্যাতির গোলাপ। কবিতার পাশাপাশি শিশু সাহিত্যেও রয়েছে তাঁর প্রশংসিত পদছাপ। একজন আবেগী সংগীত রচয়িতা হিসেবেও কুড়িয়েছেন প্রশংসা। সময়ের সাহসী স্বাপ্নিক কবি শাফিকুর রাহী লিখেছেন অনর্গল। শাফিকুর রাহী স্বপ্নচাষী। মানুষের সুন্দর ও নিরাপদ জীবনের স্বপ্নে গ্রথিত হতে থাকে তাঁর কাব্যের পঙতিমালা। শত দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণার পৃথিবীতে বাস করেও রাহী আশাবাদী। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে মাটি ও মানুষকে রক্ষা করার সংকল্পে তাঁর শানিত শব্দমালার প্রকাশ তারুণ্যের দ্রোহী কণ্ঠ। মা বাবার বাঁধন-ছেঁড়া চির অভিমানী রাখাল গৃহবিবাদের কারণে প্রিয় স্বজনের অমানবিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সংঘাত সংঘর্ষকে এড়িয়ে যৌবনের শুরুতেই জন্মভূমির বসতভিটে ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। আজো সেই ক্ষোভ ও দ্রোহের অঙ্গীকারে অবিচল তিনি।