"সূফী মোতাহার হোসেন জীবন ও কাব্য" বইয়ের ভূমিকা : কবি সূফী মােতাহার হােসেনকে নিয়ে কিছু লেখা মনে হয়েছিল সুদূর পরাহত অলস কল্পনা। কিন্তু যিনি দাগ কেটেছেন মনের গহীনে তিনি মহাসাগরের ঢেউয়ের মত বারে বারে আঘাত করেন চেতনার বালুতটে। হিজল তমাল দোয়েল শ্যামার দেশের এক অসাধারণ কবিকে মনে করার মাঝে রয়েছে এক ধরনের আনন্দ। যিনি নিজেই ছন্দের কাঙাল, যিনি নিজেই রঙধনু, তাঁকে আর নতুন করে রাঙানাের দরকার নেই। তথাপি তিনি যখন রয়ে যান লােকচক্ষুর অন্তরালে তখন তাঁকে বারে বারে মনে করা দরকার যাতে দূরে কোথাও না চলে যান। কবি চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে তাও হয়ে গেল প্রায় চার দশকের বেশি। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিসুধা রয়ে গেছে আমাদের মাঝে। আর তারই নির্যাস এই বই। এই বইয়ে কবির জীবনকথা ও কাব্যপ্রতিভা আলােচনার পাশাপাশি তাঁর দুপ্রাপ্য কাব্যগ্রন্থত্রয় ও কিছু অগ্রন্থিত কবিতা, গল্প একটি মােড়কে নিয়ে আসা হয়েছে। কবির জীবদ্দশায় তিনটি সনেটগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলাে সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। একটি গ্রন্থ পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারে, বাকিগুলাে কবিপুত্র ও কবিভক্ত এবং সমসাময়িক পত্রিকাসমূহ থেকে। আজ এই বইটি প্রকাশের সময় সবচেয়ে বেশি স্মরণ করছি কবিপুত্র সূফী আবদুল্লাহ আল মামুনকে। তাঁর ঐকান্তিক সহযােগিতা ও উৎসাহ না পেলে এই কাজের সূচনাই হতাে না। তিনি শেষাবধি ছিলেন একান্ত কাছে। আর তার সাথে মনের তাগিদে এগিয়ে এসেছেন কবিভক্ত আনােয়ার করিম। উভয়ে কবি ও সাহিত্যিক। তাঁদের কবিমন আমাকে নিরন্তর তাগিদ দিয়েছে কাজটি সুসম্পন্ন করার জন্য। আমি আরাে কৃতজ্ঞতা জানাই কবি সূফী মােতাহার হােসেনের স্নেহধন্য দু’জন ছাত্র, বর্তমানে যার যার ক্ষেত্রে স্বনামধন্য, অধ্যাপক এম.এ সামাদ ও এ্যাডভােকেট সুবল চন্দ্র সাহা, নিবেদিতপ্রাণ গবেষক ড. ইসরাইল খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-গ্রন্থাগারিক জনাব ময়েজউদ্দিন খান এবং বাংলা একাডেমির প্রধান গ্রন্থাগারিক জনাব মােঃ মােবারক হােসেন ও সহকারি গ্রন্থাগারিক জনাব মােঃ এজাবদ্দীন মিয়াকে তাদের সার্বিক সহায়তার জন্য। এতদ্ব্যতীত আরাে যারা সহায়তা করেছেন এবং যাদের লেখা থেকে তথ্য উপাত্ত নিয়েছি তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একজন নিভৃতচারী গুণী কবিকে তাঁর সৃষ্টিসম্ভার নিয়ে একটি মােড়কে ধরে রাখার বাসনা অন্যের ভালােবাসার দুয়ারে কড়া নাড়ক এই কামনা করছি। যে কোন সমালােচনাকে জানাই স্বাগতম।